শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী-ক্ষমতার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়

সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে যাঁরা সংসদে আছেন, তাঁদের সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়। নির্বাচিত সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, এটা ঠিক নয়।


গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সংসদ থেকে সব রকমের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় পাঁচ হাজার ২৯২টি নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোনো অনিয়ম হয়নি। তাই কোনো নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না যাঁরা বলেন, তাঁরা ঠিক বলেন না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো সামরিক শাসনের গর্ভে বা কোনো জেনারেলের পকেট থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগের জন্ম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রবিরোধীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের সেই সব খেলোয়াড়দের সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়।
বিভিন্ন টক শো ও গণমাধ্যমে কলাম লিখনের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনাকারীদের একহাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কিছু ব্যক্তি আছেন, যাঁরা নিজেরা দল করতে পারেন না, দল করতে গিয়েও ব্যর্থ হন, অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ রয়েছে। তারাই বিভিন্ন টক শোতে গিয়ে টেলিভিশন ফাটিয়ে ফেলেন, আবার কলম দিয়ে কিছু সংবাদপত্রে যা খুশি লিখে যাচ্ছেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এদের জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার বা পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা নেই বলেই গণতন্ত্রকে ভয় পায়। সে জন্যই গণতান্ত্রিক সরকারকে কিভাবে ছোট করা যায়, সে চেষ্টাই করে। কারণ দেশে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। কিন্তু আমরা সংবিধান সংশোধন করে জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছি। আর কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।'
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচটি বছর জোট সরকার যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, তা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমরা চাই না দেশ ও জনগণের ভাগ্যে আবারও সেই দুর্দিন ও অমানিশার অন্ধকার ফিরে আসুক।'
দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গতবার ক্ষমতায় আসার পর শুনলাম দেশ নাকি গ্যাসের ওপর ভাসছে। গ্যাস বিক্রির জন্য আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হলো। আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি- এটাই ছিল আমার অপরাধ। গ্যাস বিক্রিতে রাজি হলেন বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমার বাবা-মা, ভাইসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমারও জীবন যায় যাক, তবুও বাংলাদেশের জনগণের এতটুকু ক্ষতি আমি হতে দেব না। মৃত্যু বা জীবনের ভয় আমি করি না। দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা করার সাহস আমার আগেও ছিল এখনো আছে।'
'৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পরিবর্তে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করার জন্য জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী বানিয়ে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছিলেন। জেনারেল এরশাদও বঙ্গবন্ধুর খুনিকে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী করেছিলেন। মানিক মিয়ার এক ছেলেও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে রাজনৈতিক দল 'প্রগশ' বানিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, "জেনারেল জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে আত্মস্বীকৃত খুনি রশিদ-হুদাকে এমপি বানিয়ে বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। খুনিরা দম্ভভরে বলত, 'আমাদের বিচার কে করবে?' কিন্তু দেশের জনগণের আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস ছিল বলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করেছি, বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছি, ইনশা আল্লাহ এ বিচারের কাজও আমরা শেষ করব।"
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল জিয়ার আমলে প্রায় ১৮-১৯টি ক্যু হয়েছে। কোনোটারই সঠিক বিচার হয়নি। বিচারের নামে প্রহসন করে অসংখ্য সামরিক অফিসার ও সৈনিককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে বিডিআরের ঘটনায় সত্যিকারের বিচার হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'মাত্র তিন বছরেই আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণের মতো বাড়িয়েছি। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি, খাদ্যেও স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে বাংলাদেশ।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। আলোচনা সভার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.