গ্রেনেড হামলার অষ্টম বার্ষিকী আজ

আজ ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার অষ্টম বার্ষিকী। ২০০৪ সালে এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
এ ছাড়াও এই হামলায় আরো ৪০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ স্মরণ দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।

পরে একই স্থানে তিনি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সাথে সাক্ষাত এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আজ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ কুদ্দুস পাটোয়ারীর পরিবারের সাথে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করবেন।


পরে বিকেল ৫টা ২১ মিনিটে অস্থায়ী বেদীতে আলোক শিখা প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়ে একুশে আগস্ট শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
তারা এ দিবসকে জাতির কলংক হিসেবে উল্লেখ করে বাণীতে বলেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি সেদিন আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযথ পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয় বলে পরবর্তীতে জানা গেছে। সেদিন শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃংখলা, ভয়াবহ মৃত্যুও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সে সময়ে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন।

মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপাচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্পিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণ শক্তি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন-আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল অব. মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্ঝেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া প্রমুখ।

মারাত্মক আহতরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন ও মামুন মল্লিক।

এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিপূর্বে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে।

সে সময় বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শুধু তাই নয়, গ্রেনেড হামলার সকল আলামত নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি সরকারের জজ মিয়া নাটক ছিল একটি প্রহসন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাত বছর ও অধিকতর তদন্তের আদেশ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সম্পূরক এ চার্জশিট দাখিল করতে দুই বছরে ১৪ দফা সময় নেয়া হয়।

এরপর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ পরবর্তীতে তদন্ত করেন । তিনি একই বছরের ৩ জুলাই গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিষ্ফোরকের পৃথক দুই মামলায় সিআইডির সম্পূরক অভিযোগপত্র (চাজশিট) দাখিল করেন। নতুন সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এতে করে এই মামলায় প্রথম এবং সম্পূরক চার্জশীটের মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে। আসামিদের মধ্যে ৩৩ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে একমাত্র জামিন পাওয়া আসামি হলেন ঢাকার সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান আরিফ।

সম্পুরক চার্জশিট দাখিলের সময় মোট ১৮ জন পলাতক ছিলেন। পরে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলে পলাতক আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে।

পলাতক ১২ আসামি হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মেজর জেনারেল অব. এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল অব. সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, জঙ্গি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, ছোটভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু, পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান ও সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সে সময়ে কোনো আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের আড়াল করার হীন উদ্দেশ্যে জজ মিয়া নামক এক অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তদন্তকে তারা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালায়।

তিনি বলেন, এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে তদানীন্তন সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীরাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো। তাই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত অপরাধী এবং হুকুমের আসামিদের যথোপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সূত্র: বাসস।

No comments

Powered by Blogger.