ঈদের আগেই ছাত্রদলের কমিটি!

ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই ছাত্রদলের নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। এ লক্ষ্যে কাজ করছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই। এ নিয়ে গত ১৯ তারিখে তিনি ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আজ শনিবার আবারও বসবেন।


বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগেই নতুন কমিটি ঘোষণার চেষ্টা চলছে। দলের চেয়ারপারসনেরও তাই মত। তবে এই সময়ের মধ্যে সম্ভব না হলে ঈদের পরপরই কমিটি গঠন করা হবে।
জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। বৈঠকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমসহ ১৭৫ জন ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে বক্তব্য দেন ২৭ জন। জানা যায়, ২০ জনই সিনিয়র ও জুনিয়র সমন্বয় কমিটি চেয়েছেন। বাকিরা কেউ জুনিয়র আবার কেউ সিনিয়রদের নিয়ে কমিটি করার কথা বলেছেন।
সূত্র মতে, আজ আবারও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে বসবেন খালেদা জিয়া। সেখানে বক্তব্য দেবেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক থেকে সভাপতি পর্যন্ত।
খালেদার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ : আর্থিক লেনদেন, নিজেদের প্রভাব বিস্তার, অছাত্রদের পদায়নসহ ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি নিয়ে নানান অভিযোগের কাগজ এখন খালেদা জিয়ার হাতে। ছাত্রদলের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক জানান, আর্থিক দ্বন্দ্বের কারণে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম মহানগর, সিলেট মহানগর, বরিশাল মহানগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানের কমিটি দিতে পারেননি বর্তমান নেতারা। ১০ বছর ধরে গাজীপুরের কমিটি দেওয়া হয়নি, অর্থের বিনিময়ে ৪৫ বছর বয়সী নেতাকে করা হয়েছে ময়মনসিংহ ছাত্রদলের সভাপতি। ওই নেতা আরো জানান, ছাত্রদলের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। যার বেশির ভাগের অবস্থাই তথৈবচ। তা ছাড়া দলের চেয়ারপারসন চাচ্ছেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলার কমিটিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে এসব জেলায়ই কমিটি নেই। যেখানে রয়েছে সেখানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে।
২০০৯ সালের ১ জুলাই ২৫০ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মেয়াদ ছিল ছয় মাস। এরপর নতুন আরেকটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার কথা। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর পরও নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। এতে হতাশ সক্রিয় নেতারা।
বর্তমানে কমিটির একজন সহসভাপতি বলেন, 'আমরা যাঁরা এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নির্যাতন, বর্তমান সরকারের গ্রেপ্তার, মামলা-হামলা সহ্য করলাম; তাঁদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। আমাদের বাদ দিয়ে কমিটি হলে ছাত্রদলে নতুন করে বিদ্রোহের আগুন জ্বলবে।' তাঁর মতে, তা ছাড়া দলের হাইকমান্ডকেও ভাবতে হবে_তাঁরা ছাত্রলীগের মতো অনুর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট দল চায়, নাকি জাতীয় ক্রিকেট দল।
অন্যদিকে জুনিয়রা বলছেন, 'বিএনপির কোনো না কোনো নেতা তাঁদের পকেট কমিটি করতে চাচ্ছেন। পকেট কমিটি কিংবা অঞ্চল বা স্বজনপ্রীতি করা হলে, আমরা পার্টি অফিস ঘেরার করতে বাধ্য হব।'
এক প্রশ্নের জবাবে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালের কণ্ঠকে বলেন, সিনিয়র নাকি জুনিয়র, কিংবা সিনিয়র ও জুনিয়র সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপারসন।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, বেগম জিয়া দলের প্রয়োজনে যখন চাইবেন তখনই ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ছাত্রদল দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি সংগঠন। এখানে ছোট-খাটে কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। তবে যেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধারা বজায় থাকবে।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আজ বৈঠক শেষে বেগম জিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেন বা আগামী রবিবারও বসতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.