নামকরণ ব্যাধি ব্রিটেনেও! by আসিফ আহমেদ

বিগ বেনের নাম বদলে হয়েছে রানী এলিজাবেথ টাওয়ার। বর্তমান রানীর সিংহাসনে আরোহণের ৬০তম বছরকে স্মরণীয় করে রাখতেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পার্লামেন্টের প্রধান তিনটি দলের সদস্যরা এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে এমন উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হবে_ সেটা আশা করা যায় না।


এ কারণেই প্রস্তাবের উদ্যোক্তাদের মনোভাব খানিকটা রক্ষণাত্মক। তারা বলছেন, বিগ বেন হচ্ছে ১৩ টনেরও বেশি ওজনের একটি ঘড়ির নাম। আর এটিকে ধারণ করে আছে যে টাওয়ারটি, তার নাম ক্লক টাওয়ার। বিগ বেন নয়, প্রকৃতপক্ষে বদলে যাচ্ছে টাওয়ারটির নাম। কিন্তু তাতেও সবাই যে আশ্বস্ত হচ্ছেন_ সেটা বলা যাবে না। জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৪৪ ভাগ লোক মনে করে, এটি ভুল পদক্ষেপ। আর মাত্র ৩০ ভাগ বলছে, রানীর প্রতি এমন সম্মান দেখানো যেতেই পারে।
প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টারের ওয়েস্ট টাওয়ারটি রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার নামে। এ নামকরণ হয়েছিল ১৮৬০ সালে।
এ ঘড়ির মিনিটের কাঁটার ওজন প্রায় ১শ' কেজি এবং লম্বা ৪ দশমিক ২ মিটার। ১৮৩৪ সালে প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টার আগুনে পুড়ে যায়। এর ১০ বছর পর সিদ্ধান্ত হয় যে, হাউস অব পার্লামেন্টের নতুন ভবনে একটি টাওয়ার ও একটি ঘড়ি থাকবে। এত বড় একটি ঘড়ি বানানো সহজ ছিল না। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ১৮৫৯ সালের ৩১ মে প্রথম ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। কয়েক মাস পর আবার কিছু সমস্যা দেখা যায় এবং সেটা দূর করা হয়।
লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় রয়েছে এ ঘড়ির স্থান। কেন বিগ বেন নাম_ এ নিয়ে দুটি মত রয়েছে। একটি মত হচ্ছে, ঘড়ির কাজে বিশেষভাবে যুক্ত স্যার বেনজামিন হলকে স্মরণ করেই এ নামকরণ। কারণ তাকে 'বিগ বেন' নামে ডাকা হতো। আরেকটি মত হচ্ছে, সে সময়ের হেভিওয়েট বক্সার বেনজামিন কাউন্টের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই এ নাম রাখা হয়েছে। তিনিও বিগ বেন নামে পরিচিত ছিলেন। খুব ভারী কিছু বোঝাতে এ ধরনের নাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দি ভানক্যুভার ক্যুরিয়ার লিখেছে, ক্লক টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছে ১৮৫৯ সালে। আর রানী এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণ এর প্রায় ১শ' বছর পরে। তার নামে এ টাওয়ারটির নাম রাখার যুক্তি কোথায়?
বাংলাদেশে নামকরণ বরাবরই একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা। এর শুরু কিন্তু ব্রিটিশ আমলেই। এই ঢাকাতেই ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। কার্জন হল এবং মিন্টো রোড এখনও চালু রয়েছে। পাকিস্তান আমলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে অনেক কিছুর নাম রাখা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন যে দল ক্ষমতায়, তারা নামকরণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আদর্শ দিয়ে নয়, এভাবেই তারা নেতাদের 'স্মরণীয়' করে রাখতে চায়। ক্ষমতার বদল হলে নামও বদল হয়ে যায়। আবার নাম বদলালে তার প্রতিবাদে হরতাল আহ্বানেরও নজির রয়েছে।
জনগণের এসব পছন্দ কি-না, সেটা নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। তবে তারা এখন ব্রিটেনের যুক্তি দিতেই পারে। সেখানে প্রধান তিনটি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে রানী এলিজাবেথের প্রতি সম্মান জানানোর। জনমত তাতে বাদ সেধেছে। কিন্তু তারা এর থোড়াই পরোয়া করছে।
বাংলাদেশে জনমত উপেক্ষা করলে সমস্যা কোথায়?
 

No comments

Powered by Blogger.