সন্ত্রাসের জনপদে শান্তি

অন্য ইউনিয়ন পরিষদের জন্য দৃষ্টান্ত শহরাঞ্চল তো বটেই, দেশের গ্রামাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দীর্ঘদিন ধরেই সন্তোষজনক নয়। যত বেশি প্রত্যন্ত অঞ্চল, তত বেশি অন্যায়-অবিচার, হানাহানি, শিক্ষাবিমুখতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নারী অধিকার লঙ্ঘন, একে অন্যের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং জনপ্রতিনিধিদের বৈষম্যমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়।


গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থানীয় প্রশাসন তথা সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, চারদিকের এই নৈরাজ্যের মধ্যেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা উদাহরণ তৈরি করে সমাজে আশার আলো জ্বালতে চেষ্টা করছেন। তেমনই একজন মানুষের কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে বোয়লিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খোয়াজ হোসেন তাঁর কর্মকাণ্ড দিয়ে দলমত-নির্বিশেষে গোটা ইউনিয়নের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। একসময় এ জনপদ সন্ত্রাসকবলিত থাকলেও সর্বশেষ নির্বাচনে নির্বাচিত এই চেয়ারম্যান তাঁর সহকর্মী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের সহযোগিতায় এলাকায় শান্তি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ গড়ে তুলেছেন। চাষিদের জন্য সমন্বিত বালাই দমন বা আইপিএল ক্লাব গড়ে তুলেছেন প্রতিটি ওয়ার্ডে। তাঁরই উদ্যোগে বিভিন্ন কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রম চালু হয়েছে। উল্লেখ্য, গোয়ালগ্রাম নামের গ্রামে অবস্থিত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের বধ্যভূমিতে তাঁরই প্রচেষ্টায় একটি স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে, যা আজই জেলা প্রশাসন থেকে উদ্বোধন করা হবে। খোয়াজ হোসেন স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। তাঁর বাবাও এলাকায় জনকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
মানুষের মন জয় করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। যাঁরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেন, তাঁরা একটু ন্যায়বিচার, একটু বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করলে এবং জনগণের সেবার মনোভাব থাকলেই এ দেশের মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। দুঃখের বিষয়, নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম অনেক জনপ্রতিনিধি উপরোলি্লখিত এই স্বাভাবিক দায়িত্বগুলো ভুলে যান। দেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের বাস। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ওপর জনগণের অপরিসীম দায়িত্ব। বোয়লিয়া ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্ত অন্য চেয়ারম্যানদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে বলে আশা করা যায়। নিশ্চয়ই আরো কেউ, আরো কোনো জনপ্রতিনিধি এমন নিজ দায়িত্ব পালন করছেন; কিন্তু যাঁরা এ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের সতর্ক হতে হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে তাদের কল্যাণে নিজেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়োজিত রাখতে না পারলে তার পরিণাম যে ভালো হয় না সে উদাহরণ আমাদের সামনে অসংখ্য। আরো মনে রাখতে হবে, জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনতে না পারলে কোনোভাবেই মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে নৈতিকতার প্রশ্নও আছে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্যপ্রার্থীকে সহযোগিতার চেষ্টা করা একটি মানবিক গুণ। এই গুণটি আয়ত্ত করাও একজন দায়িত্বশীল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা সদস্যের প্রধান কর্তব্য।

No comments

Powered by Blogger.