উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত, চার শিশুর মৃত্যু

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে শত শত গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এর মধ্যে গাইবান্ধায় চারটি উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।


উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও যমুনায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা শহররক্ষা বাঁধ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সিলেট বিভাগে উজানের বন্যার পানি কমতে থাকলেও ভাটি এলাকার উপজেলাগুলোতে নতুন করে আরো বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কোনো কোনো এলাকায় আরো অবনতি হয়েছে। বন্যার কারণে গতকাল কক্সবাজারের চকরিয়ায় তিন শিশু এবং কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমাদের স্থানীয় অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ_
গাইবান্ধা : গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়াসহ ঘাঘটের পানি ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে এবং কোনো কোনো এলাকায় বিপজ্জনক ফাটল দেখা দিয়েছে। ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এলাকা এবং বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল সদর উপজেলাসংলগ্ন খোলাহাটী ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই দশআনী শহর রক্ষা বাঁধের ৩০ ফুট অংশ বৃহস্পতিবার ভোরে ধসে গিয়ে ওই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের কাউন্সিলের বাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় সেখান দিয়ে পানি এখন ভেতরে ঢুকে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনগণ বালির বস্তা ফেলে ওই ফাটল বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া বাজার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতর দিয়ে অন্য পাড়ে পানি চুইয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রতনপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর বাজার এলাকা সম্পূর্ণরূপে ডুবে গেছে। ফুলছড়ি উপজেলার গোটা শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বুধবার রাতে গাইবান্ধা জেলা সদরে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
কুড়িগ্রাম : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমরসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৫২ ও ধরলায় ৩৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজীবপুর, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার দুই শতাধিক চর, দ্বীপচর ও নদীসংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, নুনখাওয়া, অষ্টমীর চর, নয়ারহাট, চিলমারীসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় পুরো এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও ভবন জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। পানিবন্দিদের অনেকে উঁচু রাস্তা ও বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। যাত্রাপুর নুনখাওয়া সড়ক ভেঙে পাঁচটি গ্রামের চার শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : বন্যার পানির তীব্র চাপে রৌমারীর ফুলুয়ার চর পাকা রাস্তা, যাদুরচর বেড়ি বাঁধ, রাজীবপুরের সবুজপাড়া সড়ক ভেঙে গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বাইসপাড়া চরের মোজাম্মেল হকের এক জোড়া মহিষ। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে রৌমারীর বাউসমারী গ্রামের শহিদুর রহমানের মেয়ে সখি খাতুন (২)। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে আগামী ২৪ ঘণ্টা। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে রাজীবপুরের তিন ইউনিয়ন এবং রৌমারীর বন্দবেড়, যাদুরচর, চরশৌলমারী ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার ৪০ গ্রাম। এতে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে অতিক্রম করায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে তীরবর্তী ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনা নদী ফুঁসে উঠছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধির কারণে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ধস দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর চন্দনবাইশা স্পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চন্দনবাইশা স্পার-১ হিসেবে পরিচিত মিনি গ্রোয়েনের বেল মাউথের (সম্মুখ ভাগ) ৫ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুটি গ্রামসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। হার্ড পয়েন্টে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে হার্ড পয়েন্টের সি এলাকার ২০ মিটার থেকে ৮০ মিটার পর্যন্ত ৬০ মিটার এলাকা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এই স্থানটিতে নদীর গভীরতা প্রতিদিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সূত্র জানায়, মে মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত উলি্লখিত স্থানে নদীর গভীরতা স্বাভাবিক ছিল। গতকাল পর্যন্ত সেখানে নদীর গভীরতা ছিল ১১৫ ফুট। হার্ড পয়েন্টে আবার ধস নামার আশঙ্কায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য গতকাল সকালে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সিলেট : সিলেটে সীমান্তবর্তী বন্যাকবলিত তিনটি উপজেলার পানি কিছুটা কমলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন উপজেলায় পানি বাড়ছে। তবে সিলেট নগরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
সিলেট নগরে অন্তত ১৫টি এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন যাপন করছে। নগরের উপশহর, মেন্দিবাগ, সোবহানিঘাট, চালিবন্দর, ছড়ারপার, কুশিঘাট, ঘাসিটুলা, কাজলশাহ, কুয়ারপার এলাকায় মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছড়ারপারের বাসায় হাঁটু পানি। বাসা থেকে তিনি নৌকায় চড়ে বন্যাকবলিত বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। পানিবন্দি হাজারো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হচ্ছে। এসব ঘরছাড়া মানুষকে আশ্রয় দিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ইতিমধ্যে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন নিজ উদ্যোগে তাদের খাবারের সংস্থান করছে। তা ছাড়া আমরা প্রথম দিন শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। আজ দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে।'
জেলার বিভিন্ন উপজেলার আক্রান্ত এলাকা থেকে পানি কিছুটা নামতে শুরু করলেও সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃব্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত অন্যান্য নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ। ভারত সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারতের বরাক নদ দিয়ে প্রবল বেগে স্রোত জকিগঞ্জ হয়ে নদের তীর উপচে ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বুধবার রাত থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়কের তেরাদল এলাকায় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কিছু ছোট-বড় যানবাহন আটকা পড়ে। উজানের পানি কমলেও ভাটি এলাকার বিভিন্ন উপজেলা বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর এলাকায় পানি বাড়ছে। এই তিনটি থানায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার্তদের মাঝে যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য পাঁচটি উপজেলায় ৩৯টি মেডিক্যাল টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আক্রান্ত এলাকায় এক লাখ ৬০ হাজার খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ তিন লক্ষাধিক বিভিন্ন ধরনের ক্যাপসুল পাঠানো হচ্ছে। ত্রাণ হিসেবে গতকাল পর্যন্ত ৫৬ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুই দিন ধরে সারা দেশের সঙ্গে ছাতক উপজেলার সড়ক ও রেলযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় এ উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সারা জেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় দরিদ্র লোকদের মধ্যে সরকার আজ থেকে ত্রাণের চাল বিতরণ করবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিনের চেয়ে পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার কমেছে।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) : সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন, ছদাহা, বাজালিয়া, দক্ষিণ ঢেমশা, সোনাকানিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি প্রায় নেমে গেছে। তবে কেঁওচিয়া, তেমুহনী, জনার কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, উত্তর ঢেমশা, নলুয়া, মৈশামুড়া, আমিলাইশ, উত্তর কাঞ্চনা, পশ্চিম ঢেমশা, চরতিসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। চরতি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরতি, উত্তর তুলাতলি, ব্রাক্ষণ ডেঙ্গা ও দ্বীপ চরতি এলাকায় ৯টি বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলায় কবলিত মানুষের মধ্যে ২৫ মেট্রিক টন চাল, চিঁড়া, চিনি ও বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে।
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : বাঁশখালী উপজেলায় বন্যাকবলিত ১১৩টি গ্রামের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উপজেলার প্রধান সড়কের ১৫ কিলোমিটার ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ১০০ টন চাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার দেড় শতাধিক উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বই ও কাগজপত্র নষ্ট হয়। পাহাড়ধসে পুকুরিয়া চা-বাগানের এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : এই উপজেলায় গতকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান। বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
কক্সবাজার : জেলায় বুধবার রাত থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে দুর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। তবে রামু উপজেলার অর্ধশত গ্রামে এখনো পানিবন্দি আছে হাজার হাজার মানুষ। উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়া পালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানিয়েছেন, জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২১টি ইউনিয়নে ২১ লাখ টাকা, ৪২ বস্তা চিঁড়া ও ৫০০ কেজি গুড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উখিয়া (কক্সবাজার) : উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রাণ তৎপরতা খুবই অপ্রতুল। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত উপজেলায় মাত্র তিন টন চাল, ২০ বস্তা চিঁড়া ও ২০ প্যাকেট গুড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়া উপজেলায় মাতামুহুরী বিধৌত কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও নতুন করে আরো ছয়টি উপকূলীয় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়ন হচ্ছে বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল। নতুন করে উপকূলীয় ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার জাকির হোসেন। তিনি জানান, চকরিয়ার খুটাখালী ছড়াখালে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে আরো দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো উত্তর ফুলছড়ির করিব আহমদের ছেলে তাসফিক (৫) ও কলিম উল্লাহর ছেলে মো. শামীম (৫)। অন্যদিকে পেকুয়া উপজেলার নন্দীরপাড়া গ্রামে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে জোবায়ের নামে ছয় বছরের এক শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন পেকুয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন।

No comments

Powered by Blogger.