কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো নাবিলার জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গেল by ড রেজাউল হক হেলাল

জীবন শুধুই স্মৃতি একটি কবিতার এলবাম। এই এলবামে কাজ করেছে ইসলামী গানের জনপ্রিয় শিল্পী হাসনা হেনা আফরিন ও আমার মেয়ে নাবিলা হক। আল কোরআন একাডেমী লন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত এলবামটি এখন আমার মেয়ের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেলো। একদিন কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো নাবিলার জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গেল।

আমি ড রেজাউল হক হেলাল সৌদি আরবে কর্মরত। আমার স্ত্রী দুই মেয়ে নিয়ে ঢাকা দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশে খান মনজিলে থাকেন। সে এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। জামিলা এবং এই প্রতিভাময়ি মেয়েটি নিয়ে আমার সুখের সংসার। মেয়েটি একাডেমীক শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল উদীয়মান সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মী ছিল। বাংলা ইসলামী গানের জনপ্রিয় শিল্পী হাসনা হেনা আফরিন ও নাবিলা হকের যৌথ ভিডিও এলবাম “জীবন শুধুই স্মৃতি” দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। আমি প্রবাসে থাকলেও আমার মেয়ের শিক্ষা, সাংগঠনিক কাজ সৃজনশীলতার বিকাশ থেমে থাকেনি।আমার স্ত্রী নিরলসভাবে মেয়ের শিক্ষা ও পরিচর্চায় লেগে ছিলেন।সৎ চরিত্রবান যোগ্য ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে পাকা পাকি হয়। মোবাইলে আমরা বাপ-বেটি এসব নিয়ে বেশ মজা করতাম। প্রবাস জীবনের একাকীত্বে মেয়েটির কথা মেসেজ হঠাৎ আনন্দের ঝিলিক দিতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ মা-মেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে জায়নামাজেই ছিল। হঠাৎ নাবিলা বললো আম্মু আমার মাথা ব্যাথা করছে, একটু পানি দাওনা আম্মু! সুরা পড়ে একটু ফু’ দিয়ে দাওনা! বলতে বলতে মেয়েটি ওখানেই শুয়ে পড়ে। সেই যে চোখ বন্দ করেছে আর চোখ খুলেনি। দ্রুত ডাক্তার ডেকে আনলে জানা যায় আমার মেয়েটি ব্রেন ষ্টোক করেছে। সে আর কোনদিন চোখ খুলবেনা আমার স্ত্রী ভাবতেই পারেনি আজকের বিকেলটা হবে নাবিলার সাথে শেষ বিকেল। আমি আমার পরিবার নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছিলাম। বাল্যকালে নাবিলা বম্বেতে একবার সিঁড়ি থেকে পড়ে দুইমাস বম্বে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ছিল। তারপর থেকে একেবারে সুস্থ সুন্দর এক প্রতিভাময়ি মেয়ে আমার। আমি সৌদি আরবের রিয়াদে। ঢাকা থেকে হঠাৎ বেগম সাহেবার কল আসে। আমি অফিসের কাজ করতে করতে দ্রুত ফোন রিসিভ করি। স্ত্রী বলেন, তোমার নাবিলা আম্মু আল্লাহর কাছে চলে গেছে। ইন্না লিল্লাহে অইন্না ইলাইহে রাজিউন। বাসায় শুধু কান্নাকাটি শোরগোল। আর ঐ ফোনটি কেউ ধরেনা। আমি বাবা। আমার বুকের ভেতরটা বেজে উঠলো।গলাটা যেন শুকিয়ে গেল। খবরটা কি সত্য? গতকালই আমি নাবিলা আম্মুর সাথে দীর্ঘালাপ করি। নয় মার্চ ফেনীতে সাইফুল ইসলামদের অনুষ্ঠানে যোগদানের প্রস্তুতির কথাবার্তা হয়।আমি আল জাবর ট্রেডিং কোম্পানির ফারুকের মাধ্যমে কিছু গিফট পাঠাই। পিতার গিফট গ্রহেনের পূর্বেই নাবিলা অনন্তকালের যাত্রায় পাড়ি জমালো? এই বুঝি নিয়তি ? নাবিলা হক ও হাসনা হেনা আফরিনের ভিডিও এলবাম জীবন শুধুই স্মৃতি লিখেছেন লন্ডন প্রবাসি লেখিকা মহসিনা আকবর। নির্দেশনায় ছিলেন বিশিষ্ট লেখক হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ।প্রযোজনায় ছিলেন বিখ্যাত লেখিকা ও গীতিকার খাদিজা আক্তার রেজায়ি। ঐ এলবামের বিষয়বস্তু আমাদের জন্য আজ সত্য হয়ে দেখা দিল।নাবিলার আবৃতি “মা মনি আজ আমি অনেক দূরে” কথাটি এখন বিষাক্ত তীরের মতো বার বার হৃদয়ে হুল ফোঁটায়। কোথাও যেন অবিরাম রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
আমাদের জীবন সম্পদ বৈভব স্ত্রি-সন্তান পরিবেশ সবকিছু এক রহস্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। কি আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালু চরে ?
সৃষ্টির রহস্যময়তা শুধু কুরআন খুলে দিতে পারে।জীবন-মৃত্যুর বাগডোর যে বিধাতার হাতে তাকে, তাঁর মেসেঞ্জারকে আমরা বয়কট করে চলেছি। আমাদের সকল কর্মকাণ্ড ভোগ এবং প্রতিযোগিতা বৈষয়িক। অথচ হাতের কাছেই আরেকটা বিশ্বজগত- আখেরাত! চর্ম চোখে দেখা যায়না বলে অনেকে বিবেকের আয়নাও ব্যবহার করেনা। অনন্তকাল ধরে জান্নাতে স্বপরিবারে সুখে থাকার আমাদের কোন আয়োজন নাই। আমরা যেন উলাইকা কাল আন আম, বাল হুম আদল।
ডঃ মুহাম্মাদ আবদুল হাই তাঁর “বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন” বইতে লিখেছেন-অনন্তকাল স্রোতের মধ্যে বুদবুদের মতো মানুষের জীবন, অবিরত ফুটছে আর ঝরছে, দুনিয়ার খেলাঘরে কয়টি মুহূর্ত কাটিয়ে দেয়ার জন্য কি তাঁর আয়োজন! আর নিজের শক্তির পরিচয়ে কি তাঁর আনন্দ! আমরা কি এই আনন্দের নেশা থেকে সামান্য সময়ের জন্য বিরতি দিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজির হবার প্রস্তুতি নিতে পারিনা?
আমার মেয়ে নাবিলার এভাবে দ্রুত বেড়ে উঠা, প্রতিভার বিকাশ মায়া-মমতায় জড়িয়ে একদিন হঠাৎ জান্নাতের ফুল বাগানে চলে যাওয়া আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আর কিছুই নয়। নাবিলা এখন হয়তবা সোনালি কবুতরের রুপ ধরে জান্নাতের বাগানে বাগানে মুক্তবিহঙ্গের মতো উড়ছে। পৃথিবীর প্রিয়জনেরা সুপারি বাগানের ছায়ায় তাঁর কবর দেখে দেখে অশ্রুসিক্ত হচ্ছে। প্রতি ওয়াক্ত আজানের সুর তাঁর কবরে যাচ্ছে।
হাসনা হেনা আফরিন ও জান্নাতুল ফেরদাউসের বিয়ে হয়েছে। নাবিলার বিয়ে পাকাপাকি হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সাথে।নাবিলার মা নানা নানি আমরা বিয়ে শাদির আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সাইফুল,টিপু, শাহিন, কাজল, নাজমা, শরিফ, নাবিলার হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সবাইর সাথে ফোনে সৌদি আরব থেকে বার কথা বলি। মেয়ের সম্মতি পাই। জীবনে এই প্রথম নাবিলা কোন ছেলে পসন্দ করল। এজন্য খুশিতে আমার ও নাসিমার মনটা ভরে উঠে। নাবিলা বলে ছিল, আব্বু শাহিনকে আপনি কি ডাকবেন? আমি বলেছি “জামাই” । মেয়ে হেসে বলেছিল নো- নো- যদি ওকে জামাই ডাকেন আপনাকে ডাইরেক শুট করবো। আপনার ছেলে নাই, আপনি আমার বরকে ছেলে হিসাবে নাম ধরে ডাকবেন। জানেন আব্বু ওদের ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো। সাইফুল ভাই খুব লাজুক খুব ভালো। আমি মেয়েকে ধমকি দিয়ে বলি এই দুষ্ট বুড়ি, বেশি কথা বলনা, নাবিলা বলল-সরি আব্বু এই কান ধরলাম। আমার স্ত্রী, ওর নানা-নানি সবাই শপিং আর বিবাহের আয়োজনে ব্যস্ত। ওদিকে মহান আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের কিছুই জানা ছিলোনা। যখন আল্লাহর পরিকল্পনা প্রকাশ পেল আমাদের কিছুই করার ছিলোনা। নাবিলার নতুন জামা দর্জির দোকানে রয়ে গেল, সে মাটির কবরে চিরদিনের জন্য লুকিয়ে গেল। আল কোরআন একাডেমীর ওই ভিডিও এলবাম “জীবন শুধুই স্মৃতি “ আমাদের জন্য শুধুই স্মৃতি হয়ে রইল। নাবিলার শুভ বিবাহের মেহেদি, পড়ার ঘরের বই খাতা কম্পিউটার সবই যেন নীরবে কাদছে। নাবিলার মা যেন জীবন যুদ্ধে পরাজিত শোকাহত এক মা। যার সতের বছরের লাগাতার পরিস্রমের পোষাপাখি নাবিলা নামের মেয়েটি আরেকটি পৃথিবীতে উড়াল দিয়েছে।সাগর সেচে কুড়িয়ে পাওয়া মানিক আমার নাবিলা।দীর্ঘকাল সৎভাবে চাকরি জীবনের একমাত্র সঞ্চয় একমাত্র অবলম্বন এবং বংশের যোগ্য চেরাগ ছিল এই গুনবতি মেয়েটি। তাঁর মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টামি আর ভালবাসা আমরা ভুলতে পারছিনা। সে তাঁর নানা অহিদ উল্লাহ পাটোয়ারিকে ডাকতো ডার্লিং, তাঁর মাকে ডাকতো কেশবতি, মুন্নি খালাকে ডাকতো ছোট আম্মু, আমাকে ডাকতো লেখক,কবি, কাজের বেটা এসব। যে কাউকে সহজে আপন করে নিত।কুরআন ও হাদিসের দামি দামি ডায়লগ আর্ট করে বাসার এখানে সেখানে ঝুলিয়ে দিতো। ইংরেজিতে চিঠি লিখত, দিগন্ত টেলিভিশনে আপুদের ঘোমটা দিয়ে খবর পড়া দেখে আমাকে বলত আব্বু আমাকে ওখানে যাওয়া দরকার। একবার বায়না ধরেছে কবি আল মাহমুদের কাছে যাবে, বললাম উনি চোখে দেখেন না, থাক। বারবার জিদ করলে জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরির একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে আমি নাবিলাকে কবির সাথে পরিচয় করাই। নাবিলা কবি আল মাহমুদের “না ঘুমানোর দল” ও “নোলক” কবিতা আবৃতি করে তাক লাগিয়ে দেয়। মৃত্যুর তিনদিন আগে আমাকে বলেছিল আব্বু আপনার ফেসবুকে মিটিং-এর ছবি নাই কেন? সত্যি সত্যি যদি আপনার কোন বই হিট হয়, তথ্য কিভাবে পাবো আব্বু? আমি বলতাম অয়েল ইউর ওন মেশিন!এতো পাকামির দরকার নেই। আমি বলেছি নাবু তুমি বাংলাদেশের কাকে ভালোবাসো? সে বলত খাদিজা আক্তার রেজায়িকে। নানু টার অন্য রকম প্রতিভা! আজ আমরা যেন শোকের সাগরে ভাসছি। মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি । ভারতের বম্বে হাজি আলীর কাছে আরব সাগরের তীরে একটা কাঠের বাড়ির দোতালায় তিন বছর থেকেছি। সে সময় একবার নাবিলা হারিয়ে যায়। আমি অফিস থেকে ফিরে সাংগঠনিক কাজে বের হবার সময় নাবিলা আমার সাথে যাবার জন্য কাঁদতে থাকে। আমার তাড়া ছিল, বেরিয়ে যাবার সময় সে আমার পিছু নেয়, ওর মা ও খেয়াল করেনি। আমার গাড়ি ছেড়ে যায়। দুই ঘণ্টা প্রোগ্রাম সেরে বাসায় ফিরে দেখি নাবিলা নাই। তার মা জানতো সে আমার সাথে বৈঠকে গেছে। যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। দ্রুত মসজিদের মাইকে উর্দুতে ঘোষণা করা হয়। নাবিলা নামকা এক লাড়কি খো গেয়া...। ওর মা তীর বিদ্ধ বিহঙ্গের মত চটপট করছিলো। মহল্লার অনেকে নাবিলাকে খুঁজতে নেমে গেল। নাসিম খান ,ইয়াকুব খান এদের বাসায় সবাই পেরেশান! ওর মামা টিটু নাগ পাড়ায় ফোন বুথে জব করত। দুই ঘণ্টা অভিযানের পর আমার মেয়েকে বস্তির একটি কাচা পাকা ঘরে পাওয়া যায়। রাজস্থানি পরিবারটি নাবিলাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে গরম গরম পায়েস খেতে দিয়েছে। দুষ্ট বুড়ি মজা করে পায়েস খাচ্ছে আর বলছে, সাত সাত লে জানা পরেগা, অরনা এয়সা হোগা।স্থানীয় বাচ্চাদের সাথে মক্তবে গিয়ে চাপড়িং হিন্দি বলত নাবিলা। অনেক ঘাম ঝরিয়ে নাবিলার মাকে শান্ত করেছি। একবার নাবিলাকে নিয়ে কোলকাতা ত্রিপুরা রুটে ইন্দিয়ান এয়ারলাইন্সে সফর করছিলাম। আমি বিমানে ডায়েরি লেখায় ব্যস্ত হওয়ার ফাঁকে মেয়েটি বিমানে হারিয়ে যায়।আমি স্টুয়ার্ডের সহায়তা চাই। মাইকে ঘোষণা দেয়ার পর এক শিখ যাত্রি হাত উঁচিয়ে ইশারা করেন। দেখি নাবিলা ঐ শিখ যাত্রির পাগড়ি পরার জন্য টানা টানি করছে। বিমানবালা নাবিলাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনেক চকলেট দিয়ে শান্ত করে। নাবিলা বক বক করছিলো। সে সময় ত্রিপুরা গোহাটি মেঘালয়ে আমার স্বস্ত্রিক সফর ছিল। বগুড়া বাঘোপাড়া স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পড়ে রামপুরা বনশ্রীর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়।রায়পুর এল এম মডেল হাইস্কুল থেকে নানা-নানির তত্ত্বাবধানে এস এস সি পাশ করে নাবিলা। হাস্না হেনা আফরিন ও জান্নাতুল ফেরদাউস দুই গানের পাখি বনশ্রীর রাইয়ান ক্যাডেট মাদ্রাসায় পড়ত। নাবিলা তাদের সাথে মিশে যায়। লেখিকা খাদিজা আক্তার রেজায়ি ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে এলে গানের শিল্পীরা বেশ ব্যস্ত হয়ে যেত। স্কয়ার হাসপাতালের বিপরীতে ক্রিসেন্ট টাওয়ারের ১৯ তলায় নাবিলাদের গানের ক্লাশ রিহারসেল চলত। দিগন্তের নয়ন মুরাদ, বিটিবি’র খ্যাতিমান গীতিকার, আরও অনেকে তাদের ইসলামী গান, কবিতা আবৃতির তালিম দিতেন। এই সব আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন শিল্প-সাহিত্য প্রেমিক ও প্রবাসি লেখক হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমেদ। ইসলামী গানের একঝাক নতুন শিল্পী এবং বাংলাভাষায় ইসলামী গানের জনক খাদিজা আক্তার রেজায়ি। রেজায়ি রচিত সাড়াজাগানো উপন্যাস “বুবু” আমার নাবিলাকে খুব আলোড়িত করে। কবর থেকে পাঠানো বুবুর চিঠি গুলো নাবিলা বার বার পড়তো। তাঁর ছোট্ট মনের অনেক কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব আমার কাছে ছিলোনা। দাগনভুইয়ার মেয়ে হলেও এই ছোট্ট মেয়েটির বিচরণ ছিল ভারত বাংলাদেশের জেলায় জেলায়। এশিয়ার অনেক শহরে নাবিলার সিজদা পড়েছে। নাবিলার মেধা ও মনন বিকাশের জন্য আমি মাঝে মাঝে পারিবারিক শিক্ষা সফরে যেতাম।চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, বদলগাছির পাহাড়পুর, বগুড়ার মহাস্থানগড়, বেগম রোকেয়ার পায়রা বন্দ আরও কোথায় কোথায় ঘুরেছি তাঁর ইয়ত্তা নাই। এজন্য সে সমাজ বিজ্ঞান, ভূগোল ইসলামিয়াতে শতভাগ নম্বর পেত।খেলাঘর আসরের লক্ষ্মীপুর জেলা পুরস্কার পাওয়ার পর আমি আমার মেয়েকে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাথে পরিচয় করাই। আমি শ্রীলংকা থেকে ওর জন্য পায়ের নুপুর এনেছিলাম, কয়দিন পরে বলে আব্বু ঝুনঝুন শব্দ হয়। তাই জিমুকে দিয়ে দিয়েছি। তার মামা মাসুদুর রহমান টিটু শিল্পকলা একাডেমী ও বিভিন্ন সাহিত্য কর্মে জড়িত। সে ছোট্ট নাবিলাকে সবুজ সেনা খেলাঘরে, বহু সংঘঠনে, বহু স্থানে নিয়ে আবৃতি, কেরাত,একক অভিনয় কৌতুকের সার্টিফিকেট আর পুরস্কারের ঢের লাগিয়ে দিয়েছিল। হিমোরা আক্তার মুন্নির সহশিল্পি হিসেবে লক্ষ্মীপুরের শিল্পাঙ্গনে নাবিলা তার জায়গা করে নিয়েছিল। পত্রিকা পেলে মেয়েটি তন্ন তন্ন করে মন দিয়ে পড়তো। ওর মা জোর করে পত্রিকা নিয়ে বলত, হয়েছে, বাপের মতো পণ্ডিতি বাদ দেন, কলেজের পড়া পড়েন। বগুড়ার কবি মোস্তফা মোঘল সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা জান্নাতাবাদে নাবিলার প্রকাশিত একটি ছড়া কবিতা মনে পড়ে- আব্বু গেছে অফিসে, আম্মু নানা বাড়ি।
ভাল্লাগেনা সারাটা দিন ঝিমুর সাথে আঁড়ি
টিচার বলেন কশ্তে কেবল বীজগনিতের অংক
ইচ্ছে করে নৌকা চালাই নদী বুড়িগঙ্গায়....
আমার আর সঠিক মনে পড়ছেনা। আবোল-তাবোল লিখে ডায়েরি ভরে দিতো মেয়েটা। ফেলানির কাব্যের কবি এফ শাজাহান, টি এম এস এস প্রধান ও বরেণ্য লেখিকা ডঃ হোসনেআরা বেগম আমার নাবিলাকে বেশ আদর করতেন। স্কুল জীবনে নাবিলা অনেক বিদেশী মন্ত্রী, রাজন্যবর্গকে রাজকন্যা সেজে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেছে। আমি সৌদি আরবে আটকা পড়ে লং টাইম তার প্রতিভা বিকাশে কোন সহায়তা করতে পারিনি।ফেলানির ঢাকা ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তন, বড় মঘবাজারে নানা টি সি টি এস এ আমি তাকে নিয়ে যেতাম। প্রোগ্রাম শেষে আবার গিয়ে নিয়ে আসতাম। মাসিক কিশোর কণ্ঠ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, বগুড়ার জান্নাতাবাদ পত্রিকায় নাবিলার লেখা কবিতা ছেপেছে। হাস্না হেনা আফরিনের সাথে ভিডিও এলবামে কাজ করে নাবিলা অপসাংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।এততুকু মেয়ে আমার কোন গৃহ শিক্ষক ছাড়াই মায়ের মমতায় এস এস সি তে জিপিএ ফাইভ অর্জন করে। এইচ এস সি তে আরেকটা জিপিএ ফাইভ উপহার দেবে বলে প্রস্তুতি নিয়েছিল। ভোর রাতে পড়ার বরকত বেশি বলে তাহাজ্জুদে উঠে মেয়েটি একা একা জ্ঞান সাধনা করত। যখন গোপীবাগে ছিলাম মেয়েটি বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মহিলা বিভাগে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করত। ঢাকা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আমি নাবিলাকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েছি।এই অল্প বয়সে নাবিলা শত শত নভেল পড়েছে।আমার ব্যাক্তিগত পাঠাগারের প্রায় তিন হাজার বই ছিল নাবিলার নিত্যসঙ্গি। আমার ড্রয়িং রুমের ডিসপ্লে বোর্ডে আমার রচিত নতুন নতুন লেখা, পেপার কার্টিং সংগ্রহ করে সে ঝুলিয়ে দিতো। তার রিডিং রুমে আমি বিশ্ব মানচিত্র এনে ঝুলিয়ে দিলে সে মুসলিম দেশগুলি গুনে গুনে আলাদা রং দিতো আর জানতে চাইত আব্বু মুসলিম দেশের সংখ্যা কবে বাড়বে? নাইজেরিয়ান শিশু বক্তা হাফজ শেখ শরফুদ্দিন খলিফার লেকচারের সিডি পেয়ে নাবিলা বার বার দেখত, একান্তে তার কচি কচি চেহারা অশ্রুসিক্ত হতো।আমাকে নাবিলা বলতো আব্বু দেখো দেখো হাউ ওয়ান্ডারফুল মিরাকল! “সাক্কাল কামার” হেরার গুহায় জিব্রাইলের দেখা, ইব্রাহিম-নমরুদ-ফেরাউনের ঐতিহাসিক ঘটনা, নীল নদের জলে বারটা রাস্তার স্টোরি আমার বিশ্বাস পোক্ত হয়েছে। নাবিলাকে দেখে কূটনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ মুহাম্মাদ সিদ্দিকের মেয়ের লেখা বইয়ের কথা মনে পড়তো। বাঙালি মেয়ে নেপালি মুসলিমদের উপর ইংরেজিতে বই লিখেছে। এ এম এন সিরাজুল ইসলামের দুই প্রতিভাময়ি কন্যার কথা মনে পড়তো। আমি ভাবতাম নাবিলা কোনদিন সারাবান তাহুরা, আখি, ফজিলা তাহের বা সামসুন নাহার নিজামির মতো ধার্মিক ও মানবতাবাদির খ্যাতি অর্জন করবে। আমি সেই ডাইজে সোনামণিকে কোলেপিঠে করে কুরআন শেখাতে শেখাতে মানুষ করতে চেয়েছি।আমার ছোট্ট সোনামণি এতো শট ট্যুরে এই গ্রহে এসেছিল জানতাম না। নাবিলা তার রিমি অ্যান্টির অস্ট্রেলিয়া যাবার খবর দিয়েছিল। রাজিনের প্রসংসা করেছিল। কারো গীবত তার মুখে শুনিনি। মাত্র কয়েকবার আমি নাবিলাকে ইসলামী ফাউনডেশনের শিশুদের লাইব্রেরীতে নিয়ে বইয়ের ভাণ্ডার দেখিয়েছি। সেখানে গেলে নাবিলাকে জোর করে টেনে বাইরে আনতে হতো। আমি প্রভারটি এলিভেশন ও রুরাল ইকেনমিক ডেভেলপমেন্টের বৈদেশিক দাতা সংস্থা টিমের একজন গবেষণা কর্মকর্তা। বাংলাদেশ তথা সাউথ এশিয়ার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে দিবারাত্রি ছুটোছুটি। সকালে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তো বিকালে ডিপ্লোম্যাটিক জোনে। কোনকোন দিন প্রাইম মিনিস্টারের দফতরে বেলা বয়ে যেত। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, কাশ্মীর থেকে কন্যকুমারি, জাফনা থেকে কলম্বো বা কাকরভিটা থেকে পোখরায় হিমালয়ের পাদদেশে রাত পোহাত। গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, দেশ থেকে দেশান্তরে আমার বিচরণ। নাবিলাকে বেশি সময় দিতে পারিনি। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ঢাকায় ফিরে এলে নাবিলাকে বুকে নিয়ে টেরিসে বারান্দায় ঘুরতাম। মেয়েটার কয়টা পাখি ছিল। ফুলের টবে তার পসন্দের ফুল থাকতো। আমি যখন বগুড়ার টি এম এস এস ভবনে থাকতাম একবার সেলিম উদ্দিন ও তার টিম গাইবান্দা থেকে মিটিং করে ফিরছিল। আমার বাসায় তাদের এবং ডঃ রেজাউল করিমের ডিনারের আয়োজন ছিল। নাবিলা এগিয়ে এসে সেদিন বলেছিল আব্বু এরা সেই পদ্মা-মেঘনা যমুনার তীরের সব আংকেল ? বগুড়ার বাবু ভাই, মাহমুদ হাসান, সাংবাদিক আবদুল ওয়াদুদ আরও একজন এস পি ছিলেন।
অসুখে নাবিলার পাখি মরে যেত। আমার নিজের যে দৈনতা ছিল, সৎ উপার্জনের নানা সীমাবদ্ধতা ছিল ওটা অনেকেই জানেনা। নিজের গরিবি খোলস আমার প্রিয়। কেননা মেয়েটা কোন অসাধ্য, গয়না গাটির আবদার করে কখনো বিরক্ত করেনি। নাবিলা নিজের একান্ত প্রচেষ্টা পবিত্র কুরআনের হাজার হাজার আয়াত মুখাস্ত করেছে। আমি সৌদি আরব আসার পর আমার মেয়েটা কার সাথে বের হবে? তার ছোট্ট প্রতিভা বিকশিত হওয়ার জন্য শুধুই লুকোচুরি খেলত। আমার মেয়ে যেন আমার বান্দবির মতো আচরণ করত। আজ সে ইহজগতে নেই। তাঁর আব্বু ডাকার স্মৃতি আমাকে কেবলই জ্বালাতন করছে। হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমেদ লন্ডন থেকে ঢাকা এলে আমাদের বাসায় গিয়ে নাবিলার খোজ-খবর নিতেন।আমাকে তিনি ফোনে বুঝাতেন। সান্ত্বনা দিতেন।আমার এই দুরন্ত মেয়েটি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক ল’তে অনার্স করার কথা বলত। সে সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরি আংকেলের কাছে যাবে বায়না ধরেছে, আমি গজারিয়া টাওয়ারের ১২ তলায় তাঁর দফতরে নিয়ে যাই। আমি বলতাম টুনটুনি বুড়ি এতকথা বলতে নেই। সে বলত আব্বু আমি আর ছোট্ট নেই, অনারেবল ফেরেস্তারা চুপিসারে সব লিখে নিচ্ছে।আমি কুরআন পড়ি, আমি তলে তলে আল্লাহর খবর রাখি। খাদিজা নানুর আর রাহিকুল মাকতুম পড়ে গ্রেট ম্যান রাসুল সঃ কে জেনেছি। এখন আমার অনেক কাজ।রাজধানীতে নানা ব্যস্ততার কারনে গত পাঁচ বছর নাবিলা ফেনীর গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেনি।ছোট্ট নাবিলা অনেক বড় হয়েছে বাড়ির বা গ্রামের অনেকে তাকে দেখেনি। সে পর্দা মেনে চলত বিধায় কলেজে সবাই সমীহ করতো। অন্য রকম দুরন্ত মেয়ে। আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে সৌদি আরবের রিয়াদের অনেকে আমাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন। বিশিষ্ট ব্যাক্তি বর্গের মধ্যে রয়েছেন আলজাবর ট্রেডিং কোম্পানির সেলস ম্যানেজার ও প্রবাসে বাংলাদেশ কমিউনিটি লিডার নুরুল ইসলাম আহমেদ, সিনিয়র সুপারভাইজার রোমান খান, ফেনী সোশ্যাল অর্গানাইজেশনের ডাইরেক্টর নুর মোহাম্মাদ, খুলনা প্রবাসি গ্রুপ এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুজাহিদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক আকবর হোসাইন ও আওয়াজ সাহিত্য সংস্কৃতি গোষ্ঠীর শিল্পী কামরুল ইসলাম, খতিব মাওলানা আবদুল আহাদ, প্রবাসি সাহিত্য পরিষদের প্রচার সম্পাদক লোকমান বিন নুর হাসেম, সৌহার্দ মাল্টিপারপাস, রিয়াদস্থ দিনাজপুর সমিতি ,সততা সমবায় সমিতি ও প্রবাসি লেখক পরিষদের নেতৃবৃন্দ, আরাইহাজার উপজেলার রুপচান ভাই, কোটালি পাড়ার এইচ এম শহিদুল্লাহ, সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া ফোনে দেশ-বিদেশের নানা জায়গা থেকে শত শত ফোন আসে। আলজাজিরা পত্রিকার নোমান ভাই, মহসিন ভাই, আলজাবের সুপার ভাইজার টিপু ভাই, আবুল কালাম ভাই, নবাবগঞ্জ সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ, মাওলানা আমির হোসাইন, অজি উল্লাহ, বিএনপি নেতা সাইফ আহমেদ তুহিন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর সৌদি আরব প্রতিনিধি ও সাহিত্যিক মোঃ মাকসুদুর রহমান,দিগন্ত টিভি’র রিয়াদ প্রতিনিধি মোঃ সিরাজুল হক মানিক, বাংলা বার্তা ২৪ ডট নেট সৌদি আরব প্রতিনিধি মোহাম্মদ আল আমীন, আমজাদ হোসেন, জামায়াত নেতা শফি উদ্দিন সরকার, আল হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সফি উদ্দিন তালুকদার, মাহমুদ হাসান, আবদুল কাদের ভাই, শান্তাহারের মমতাজ উদ্দিন, রাজাপুরের আব্দুল্যাহ মুসা আরও অনেকে। বগুড়া শহরের টিটু মিলনায়তনে বগুড়া সাংস্কৃতি কেন্দ্রের উৎসব অনুষ্ঠান চলছিল। জেনুইন মিডিয়ার ডাইরেক্টর আবুল কাশেম আমিন তাতক্ষনিকভাবে আমার মেয়ে নাবিলার মৃত্যু সংবাদ মাইকে প্রচার করে সবার কাছে মাগফিরাতের দোয়া কামনা করেন। নওগাঁর আত্রাই ও রানী নগর থেকে গভীর রাতে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে মোবাইলে।আমার মেয়ের গৃহ শিক্ষিকা আদুরি বেগম, পারইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা নিজাম উদ্দিন, জুবাইল থেকে নাবিলার হবু বরের বড়ভাই টিপু, আমার বড় ভাই আবদুল হাই দামাম থেকে ফোনে সমবেদনা জানান। আনোয়ার, আবুল বাসার, রোকেয়া নার্গিস, আমার হবু জামাতা শাহিন, তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম, নাবিলার কাকা আবু জাফর, জামাল উদ্দিন ও নাবিলার নানা অহিদুল্লাহ পাটোয়ারি আমার নাবিলাকে রামগঞ্জ মাঝির গাঁ জামে মসজিদের পাশে দাফন করেন। যে গ্রামে শুয়ে আছে বগুড়া সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, সাইয়েদ আবুল আলা মদুদির একান্ত সহচর মাওলানা নজিব উল্লাহর বংশধর শহিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (রঃ)। শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে আমার গানের বুলবুলি, করুন চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি... আমার মেয়েটি এখন আর আমাকে মিসকল দিয়ে বিরক্ত করেনা। এবার মোবাইলের রিং টোন ওপেন রাখতে ভয় নেই। নাবিলা মাঝে মাঝে আমাকে তাঁর দাদির কথা জিজ্ঞেস করত, বলত আব্বু, দাদুকে ফোন করেছেন? নাকি আবার বকা খাবেন? আমি বলতাম মায়ের বুকুনি আমার জন্য দোয়া। ওটা আমাদের আবহমান কাল ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য।গ্রামবাংলার মায়েরা এভাবে বকে বকে প্রবাসি সন্তানের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেন। বিদেশে গাড়ি ঘোড়া দেখে রাস্তা পারাপার হতে সতর্ক করেন। আমার ছিয়াশি বছর বয়স্কা মা এখনো নিজের মোবাইল নিজেই রিসিভ করেন। আমাকে লাতু বা খোকা বলে বকতে থাকেন।মায়ের বুকুনি খেয়ে আমি তৃপ্ত হই। ইট পাথরের শহরে বাস করে তোমারা ওটা বুঝবেনা। নাবুর মতো আব্বু আব্বু করে কেউ ডাকেনা।তার মাকে আর নাবুর জন্য কলেজ গেটে গরম দুধ বা হরলিক্স নিয়ে, ফ্লাক্স হাতে অপেক্ষা করতে হবেনা। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষার হলে, অনুষ্ঠানে ছুটতে হবেনা। আমাদের চিরকালের জন্য রেড সিগন্যাল দিয়ে সে অদৃশ্য হয়ে রইল। প্রবাসে বড় যাতনা বোধ করছি। নাবিলা আমার জন্য এখন শুধুই স্মৃতি। নাবিলা নিজেই বলে গেছে জীবন শুধুই স্মৃতি। আর তাঁর মায়ের জন্য এলবামে বলে গেছে- মা মনি আজ আমি অনেক দূরে।
আমার এঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মরে করেছে পর অথবা তোমাদের পানে চাহিয়া বন্দু আমি আর জাগিবনা, কোলাহল করি সারা দিনমান কাহারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা, এসব বিখ্যাত ছন্দ হৃদয়ে আন্দোলিত হয়, মায়াবী পর্দা বার দুলে উঠে।
মেয়ে নয় যেন সাত রাজার ধন হারিয়ে নাবিলার সেই কর্মচঞ্চল মা এখন নির্বাক! কুল্লু নাফসিন জা ইকা তুল মউত। ডেড লেস হিজ আইস হ্যান্ড এন অল। মৃত্যু তাঁর শীতল হাতে সবাইকে স্পর্শ করবে।আমিও যেন বাতায়ন খুলে আজরাইলের পথ চেয়ে আছি। নাবিলার শোকাহত মায়ের জন্য প্রবাস থেকে এই কবিতাটি মিড়িয়ার মাধ্যমে পাঠাতে চাই- নয়ন জলে ভেসোনা ওগো চোখ করোনা লাল।
যেজন গেছে আসবেনা আর কাঁদলে চিরকাল
নাবু তোমার শুয়ে আছে আপন খাট জুড়ে,
তাই দেখে গো হুরেরা সব করছে পাখা নেড়ে।
অজু করে এসো ওগো দুহাত তুলে ধরি।
নাবু তোমার বেহেস্তে যাক এই দোয়াই করি।
এখন প্রশ্ন, কি আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে ! নাবিলার মাকে কি বলব, আমার ও দু’চোখে ঘুম আসেনা নাবিলা যাবার পরে। সে ছিল ফুলকুঁড়ি, ফোটার আগেই মাটির ধুলায় ঝরে পড়েছে। ইসলামি সংস্কৃতির এই ক্ষুদ্র কর্মী নাবিলা তাঁর ভক্ত ও গুণগ্রাহীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে চির নিদ্রায় শুয়ে আছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের কাশিম নগর নতুন বাজারের দক্ষিনে পাটোয়ারি বাড়ি জামে মসজিদের পাশে। আল্লাহর কাছে বেলায় অবেলায়, অকাল মৃত্যু বলতে কিছু নেই। আল্লাহ হুস সামাদ! যেতে যেতে মেয়েটি আমাদের জানিয়ে গেল “জীবন শুধুই স্মৃতি”
 
ড রেজাউল হক হেলাল
Haq.rezaul@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.