দক্ষ জনশক্তি-আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর বিকল্প নেই

যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ। মানুষের শ্রমে-ঘামে-মেধায় পরিকল্পনায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। নানা মহল থেকে এ ব্যাপারে বারবার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও ক্রমেই দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টি আরো


গুরুত্ব নিয়ে সামনে আসছে। কারণ একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের পথটাও নিজেরাই অনেকটা বাতলে দিতে পারেন, যদি যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য মেলে।
৪ মার্চ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে এখন উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ, যা সংখ্যাগত বিচারে রাশিয়া, চীন, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো দ্রুত উন্নয়ন দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সম্মেলনেই এই সংবাদ অত্যন্ত আশাপ্রদ বলে উল্লিখিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কি নিশ্চিত করা যাচ্ছে? জবাব প্রীতিকর নয়। তবুও শিক্ষার বিস্তার কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করার বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। শিক্ষিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা রকমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় এই সমাজে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজ আলোকিত হয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, জ্ঞানবান মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। উদ্ভাবনী শক্তি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাত ধরেই দেশ-জাতি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পথ কুসুমাস্তীর্ণ করা, একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করা।
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর ক্রমেই বাড়ছে। সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের দ্বার অবারিত করা যাবে এমনটি সহজ না হলেও শিক্ষিত দক্ষতাসম্পন্নরা যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করতে পারেন এ বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষম হাতের অধিকারী কিংবা সৃজনশীলরা যাতে অলস পড়ে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেসব কারণে এখানে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে, তাও ভেঙে ফেলতে হবে। রাজনৈতক অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদেরও এ ব্যাপারে দায় কম নয়। স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সবাই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিষ্ঠ হলেই কেবল আশার প্রদীপ প্রজ্বলিত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.