বিপর্যস্ত সড়কপথ-ঈদে ঘরে ফেরা যাবে তো?

বর্ষাকালে পিচঢালা রাজপথ ভেঙেচুরে যায়, কোথাও কোথাও সড়ক এমনকি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে_ এটা জানা কথা এবং সবাই সেটা মেনেও নেয়। কিন্তু শুক্রবার সমকালসহ প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের যে করুণ চিত্র প্রকাশ হয়েছে তার নজির মেলা ভার।


যত্রতত্র গর্ত আর তাতে পানি জমে বুধবার থেকে সড়কটিতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাস মালিকরা ব্যয়বহুল গাড়ি এ সড়কে নামাতে মোটেই ভরসা পাচ্ছেন না। এমনকি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, 'বড় ধরনের বন্যার ফলে সড়ক বন্ধ হয়। কিন্তু বেহাল অবস্থার কারণে কোনো জাতীয় মহাসড়ক এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া নজিরবিহীন।' এক দশক ধরে বড় ধরনের মেরামত না হওয়ার কারণেই ব্যস্ত এ সড়কপথটির এমন দুর্দশা। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে একইভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবল্পুব্দ সেতু পর্যন্ত সড়ক, যশোর-খুলনা মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোনো কোনো অংশের অবস্থাও বেশ নাজুক। রাজধানীর অভ্যন্তরেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশাপাশি অলিগলির বিবর্ণ চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চলাচলের উপযোগী করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে গর্ত ভরাট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পুরোপুরি মেরামত হবে 'চার লেন প্রকল্পের অধীনে'। অথচ সড়ক বিভাগের চেয়ে এটা আর কেউ ভালো জানে না যে, তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি হয় এমন গুরুতর অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক মেরামতে অর্থ দিতে অপারগতা জানিয়েছিল। এরপর নির্মাণ কাজ নিজস্ব অর্থে সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর অংশের ৩০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর সমাধান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কেই করতে হবে। 'চার লেনের সড়ক' নির্মাণের জট শিগগির না খুললে সড়কটির অবস্থা কি গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-কামারজানী সড়কের মতো হয়ে পড়বে? গত ৩ আগস্ট সমকালে 'অভিনব প্রতিবাদ' শিরোনামের খবরে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নির্মাণ কাজে বিলম্বের কারণে তা এতই কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে যে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ার প্রতিবাদে স্থানীয় অধিবাসীরা এতে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানায়। আমরা আশা করব, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং দেশের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্পূর্ণ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। সামনে রয়েছে ঈদুল ফিতর উৎসব। এ সময়ে নাড়ির টানে লাখ লাখ মানুষ ঘরমুখো হবে। রেল ও নৌযানে তাদের সামান্য অংশই পরিবহন করা সম্ভব। মূল চাপ পড়বে বরাবরের মতোই সড়কপথের ওপর। কিন্তু এসব পথ কি ঈদের আগে চলাচলের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে? এটা করতে হলে কাজ যেমন জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে, তেমনি নিশ্চিত করতে হবে তার গুণগত মান। জরুরি কাজ করাতে গিয়ে পানিতে যেন টাকা ঢালা না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। প্রতি বছর অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ বলি হয় সড়কপথে। দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ সড়কপথের বেহাল দশা। চলার পথ এমন ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখার দায়িত্ব কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়।
 

No comments

Powered by Blogger.