কৃষিপণ্যের দাম-ফসল কেন ফাঁসির রজ্জু হবে?

কুড়িগ্রামে রোববার কিছু কৃষক-কৃষাণী যেভাবে গলায় আলু, টমেটা, শিমের মালা জড়িয়ে প্রতীকী ফাঁসির কর্মসূচি পালন করেছে, তা দর্শনীয় সন্দেহ নেই। রসাত্মক সংবাদমূল্য বিবেচনায় সমকালসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে স্বভাবতই এর সচিত্র প্রতিবেদন স্থান পেয়েছে। কিন্তু এর নেপথ্যের চিত্র বড়ই করুণ। প্রতীকী কর্মসূচির সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্বও সামান্য।


মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যদি কৃষক উৎপাদনমূল্যও ঘরে ফিরিয়ে আনতে না পারে, তখন চাষাবাদ আত্মহননেরই নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। ফসল নয়, আলু-টমেটো হয়ে ওঠে ফাঁসির রজ্জুমাত্র। কৃষকের জীবন ও জীবিকার এই অন্ধকার দিক নিয়ে আলোচ্য কর্মসূচির মাধ্যমেই প্রথম আলোকপাতের চেষ্টা করা হয়েছে, এমন নয়। সম্ভাবনার ফসল বাজারের হতাশায় তলিয়ে যাওয়ার নজির কেবল কুড়িগ্রামেই নেই। বলতে গেলে দেশের অধিকাংশ কৃষকের জন্য এ এক অভিন্ন সংকট। কৃষকের লাভের গুড়ে কীভাবে দালাল-ফড়িয়াদের পকেট পুষ্ট হয়, সে নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। বহুবারই বলা হয়েছে যে, কৃষিপ্রধান উত্তরবঙ্গের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে কী কী করা সম্ভব। কিন্তু কাজ হয়নি। ওই অঞ্চলে পর্যাপ্ত হিমাগার থাকলে কৃষককে তার সিংহভাগ ফসল ভরা মৌসুমে পানির দামে বিকিয়ে দিতে হয় না। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার কথাও নানা সময়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শোনা গেছে। মাঠ পর্যায়ে যেতে যেতে কি এসব উদ্যোগের দম ফুরিয়েছে? কুড়িগ্রামের কৃষকের ব্যতিক্রমী কর্মসূচি এসব প্রশ্ন নতুন করে তুলবে। আমরা আশা করি, প্রতীকী কর্মসূচি কৃষকের অনিবার্যতায় পরিণত হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হবেন। কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পরামর্শ ও উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এলে ফসলের মাঠ ও বাজারের বৈপরীত্য ঘুচানো কঠিন হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এর বিকল্পও নেই। প্রয়োজনীয় সেই কাজটি কুড়িগ্রাম থেকেই সূচিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.