ডিসিসি নির্বাচন-তফসিল সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে, সে সম্পর্কে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আগামী ২৯ মের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে ইসি সচেতন।


নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবার বলেছেন, 'যথাসময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের অন্তত এক দিন আগেই নির্বাচন করব।'
গতকাল কমিশনের সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। এ সময় নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সময়সীমার শেষ দিকে এ নির্বাচন করতে গেলে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এর সময়সূচি বা তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল সংগ্রহের কাজও শেষ হওয়ার পথে। তবে ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনা করেনি।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার বিষয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানান সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। তবে তিনি এ কথাও জানান, বিষয়টি সম্পর্কে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হবে। তিনি জাতীয় নির্বাচনের মতো বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের আগে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন সাবেক ইসি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে যেতে পারেনি। গত ৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শেষ বৈঠক করেন। সাবেক ইসির পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, তাঁরা নিজেদের মেয়াদের ২৪-২৫ দিনের মধ্যে এ প্রকল্প চূড়ান্ত করতে না পারলেও পরবর্তী ইসির জন্য এ কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখতে চান। কিন্তু ওই সময় কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণেই এ প্রকল্প প্রস্তাব যথাসময়ে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন হবে তিন লাখ ইভিএমের। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ইভিএম তৈরিতে প্রতিটির জন্য ৪৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। তবে একসঙ্গে বেশিসংখ্যক ইভিএম তৈরি হলে ব্যয় কিছুটা কমে আসতে পারে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজির ধারণা, একসঙ্গে তিন লাখ ইভিএম তৈরি হলে এক হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে নবনির্মিত একটি ভবন উদ্বোধনকালে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করেন। তিনি ভোটগ্রহণ ও গণনার জন্য ইভিএম তৈরি করে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন ধারা সংযোজনের জন্য বুয়েটকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এটিকে আরো একটু উন্নত করা দরকার, যাতে সঠিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হলো কি না, তা ভোটার দেখতে পান।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ : প্রতিবছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের বাধ্যবাধকতার বিষয়েও গতকাল সিইসি জানান, একসঙ্গে কয়েক বছরের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বেশ চাপে থাকতে হয়। এবারও তা করতে গিয়ে লোকবল বেশি নিয়োগ করতে হবে এবং কাজও তিন গুণ বেড়ে যাচ্ছে। আগামী ১০ মার্চ থেকে অনুষ্ঠিতব্য হালনাগাদকাজে কোনো জটিলতা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিইসি বলেন, 'আমরা একটা উপায় খুঁজে বের করেছি। ১০ মার্চ থেকে হালনাগাদের কাজ শুরু করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও থাকছে।'

No comments

Powered by Blogger.