বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ

দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে গতকাল সোমবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি নাগরিক আবদুল জলিল নামে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করেছে, আবদুল জলিল মরেননি। তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন।


এদিকে বিএসএফের নির্যাতনে আহত আরেক বাংলাদেশি নাগরিক গোলাপ রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গরু ব্যবসায়ী আবদুল জলিল (৪০) বিরামপুরের মাবুদপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
বিজিবির ৪০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তায়েব উল হক জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর সোয়া ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সীমান্তের ২৮৯/৪৬ পিলার এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ কম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক হয়। এ সময় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেনি। অবৈধভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আবদুল জলিল নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে তারা।
তবে বিএসএফের এ দাবির সত্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি বলে স্বীকার করেছে বিজিবি কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভাইগড় ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার আবদুস সোবহান এবং বিএসএফের পক্ষে ২৮ ব্যাটালিয়নের গোবিন্দপুর ক্যাম্পের কমান্ডার এস মুকুন্দর তালুকদার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার গভীর রাতে বিরামপুরের বিভিন্ন এলাকার ৪০-৫০ জন গরু ব্যবসায়ীর একটি দল ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি থানার জামালপুর গ্রামের ছাগলডাঙ্গীতে গরু আনতে যায়। এ সময় বিএসএফের ২০-৩০ জনের একটি দল তাদের ঘিরে ফেলে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা পালাতে চাইলে বিএসএফ তাদের ওপর কয়েকটি বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু (ককটেল) নিক্ষেপ করে। এতে আবদুল জলিলসহ পাঁচজন আহত হন। এরপর বিএসএফ আবদুল জলিল ও গোলাপকে আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ সময় গরু ব্যবসায়ীরা গোলাপকে বিএসএফের হাত থেকে ছিনিয়ে আনে বলে তারা দাবি করে। কিন্তু জলিলকে তারা উদ্ধার করতে পারেনি।
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিরামপুরের ভাইগড় সীমান্তে সাইফুল ইসলাম নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ।
শেরপুরে আটক ভারতীয় গোয়েন্দাকে হস্তান্তর : এদিকে আমাদের শেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার নালিতাবাড়ী সীমান্তে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক বিএসএফের গোয়েন্দাকে হস্তান্তর করেছে বিজিবি। গতকাল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জামালপুরের কামালপুর স্থলবন্দর দিয়ে ওই গোয়েন্দাকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়নের ইন্ট অফিসার (গোয়েন্দা কর্মকর্তা) মেজর নাহিদুজ্জামান।
কামালপুর আইসিপিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের ওই পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১২১ বিএসএফ প্রধান অজয় আগরওয়াল এবং বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির ৬ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক কর্নেল খবির উদ্দিন সরকার। গতকাল গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হস্তান্তর ছাড়াও বিজিবি-বিএসএফের ডিআইজি পর্যায়ে আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার সকালে নাইন এমএম পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ দিলীপ কেদার (৪৫) নামে ভারতীয় বিএসএফের এক গোয়েন্দাকে আটক করে বিজিবি। দিলীপ বিএসএফের মেঘালয় রাজ্যের ৩৫ ব্যাটালিয়নের একজন হাবিলদার এবং ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বাসিন্দা।

No comments

Powered by Blogger.