যে খবর নাড়া দেয়-তবু ভুলে যাই

কপাল চাপড়ে বিলাপ করছেন বৃদ্ধ। ব্যাকুল হয়ে কাঁদছেন পাশের মানুষটাও। শোকে আর বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে চর রমজান বেগ এলাকার আকাশ-বাতাস (সূত্র: প্রথম আলো, ১৪ মার্চ, ২০১২)। কপাল চাপড়ে কি নিজের ভাগ্যকেই দুষছেন তাঁরা? মেঘনায় লঞ্চডুবির পর এমন কত শত ছবি উঠে আসছে পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায়।

বিলাপরত মানুষের এমন ছবি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে আমাদের। সম্ভবত সে কারণেই আমরা রোজ রোজ এসব বেদনা বিধুর দৃশ্য দেখি আর ভুলে যাই। নিশ্চিতভাবে জানি, শোকে মুহ্যমান এই বৃদ্ধের ছবিও আমরা ভুলে যাব অনতিবিলম্বে। মানুষের মৃত্যু আজ সম্ভবত আমাদের খুব বেশি নাড়া দেয় না। মৃত্যুর খবর এমনকি আমাদের মনোযোগও আকর্ষণ করে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটি সংখ্যার হিসাবে অভাবনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়।
আমরা কি একবার মনে করে দেখতে পারি, স্রেফ গেল এক বছরে কতগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুসংবাদের মুখোমুখি হয়েছি আমরা? তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর, সাগর-রুনি—বড় জোর দু-চারটা নাম হয়তো আমরা স্মরণ করতে পারি। কে জানে, এই নামগুলোও হয়তো আমরা একসময় ভুলে যাব। স্রেফ পরিসংখ্যানের তালিকায় ঢুকে যাবে আমাদের নিহত স্বজন আর হূদয়ের কাছের মানুষেরা।
মৃত্যু যদি আর আমাদের আলোড়িতই না করে, একটা শোকের ঘটনা যদি আমাদের পরের শোকের ঘটনা রোধ করার ব্যাপারে ভাবিত না করে; তবে এই শোক, এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল থামবে না কোনো দিন।
মেঘনার লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মরবে, তবু ধারণক্ষমতার দু-তিন গুণ মানুষ নিয়ে লঞ্চ ছুটবে নির্বিচারে। আমাদের নদীপথ, সড়কপথ—নিরাপদ হবে না কোনোটাই। আমরা শুধু নীরব দর্শক হয়ে থাকব। বিলাপরত বৃদ্ধের ছবি ডিঙিয়ে নির্বিকার চলে যাব খেলার পাতায়। নয়তো বিনোদন পাতার গরম খবরে। যতক্ষণ না পর্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ধেয়ে আসে আমাদের নিজেদের দিকেই।
—ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.