পর্যটনকেন্দ্র-গঙ্গামতির সম্ভাবনা by নেছারউদ্দিন আহমেদ

গঙ্গামতি জায়গাটির পরিচিত তেমন ব্যাপক নয়। অনেকে হয়তো নামও জানেন না। এখানেই দাঁড়িয়ে সাগরসৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তবে যোগাযোগ-সমস্যা, আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় নয়নাভিরাম এ স্থানটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারছে না।

ভৌগোলিক অবস্থান ও দূরত্ব: দেশের সর্বদক্ষিণের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে গঙ্গামতির অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে পূর্ব দিকে মাত্র ১০ কিলোমিটার।
গঙ্গামতি সৈকতের বৈশিষ্ট্য: রামনাবাদ নদী ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় এ সৈকত দেখতে অনেকটা ইংরেজি এস আকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার, প্রস্থ হবে দুই কিলোমিটারের মতো। তা ছাড়া সৈকতের সঙ্গে দুই হাজার একরেরও বেশি খাসজমি রয়েছে।
কুয়াকাটা সৈকত থেকে পর্যটকদের অনেকে এখানে এসে থাকেন। বন বিভাগের এক হাজার ৩৩৮ একর জমি নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি গঙ্গামতির বাড়তি আকর্ষণ। সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণী। এ সৈকতের বালুমহাল ঢেকে রেখেছে প্রাকৃতিক লতাগুল্ম। এককথায় বলতে গেলে প্রকৃতি সৈকতটিকে যেন নিজেকে সাজিয়েছে আপন করে।
গঙ্গামতি সৈকতের কারুকার্যময় বেলাভূমি, আর সেই বেলাভূমিতে দেখা যাবে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার বিচরণ। ছোট ছোট ঢিবি বানিয়ে এরা এখানে নিরাপদ আবাস গড়েছে। সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঝিনুক। শীত মৌসুমে এ সৈকতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে অতিথি পাখির সমাবেশ। এখানে জেলেদের আনাগোনাও কম নয়। পাশের মৌডুবি, বড় বাইশদিয়া, ছোট বাইশদিয়া, ভোলা, গলাচিপা এমনকি কক্সবাজারের মহেশখালীর জেলেরা নোঙর করে গঙ্গামতিতেই।
গঙ্গামতির সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ করেছে ‘গঙ্গামতি খাল’, যা গঙ্গামতি সৈকতের একেবারে পশ্চিম দিকে। এটি গঙ্গামতি ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে দুই ভাগ করেছে। সাগরগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে এ খালটি চলে গেছে গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকের কাউয়ার চর গ্রামে। এই খালে নৌকা ভ্রমণ করা যায়। খালের স্বচ্ছ জলাধার আর তার দুই তীরের প্রকৃতির অপরূপ শোভায় মন ছুঁয়ে যায়।
সৈকতে বসে কথা হয় বেড়াতে আসা সৈয়দা হাবিবার সঙ্গে। সপরিবারে তাঁরা কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন। কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে শুনলাম নতুন এ স্থানটির কথা। তাই চলে এলাম। প্রকৃতি, পাখির কলকাকলি, সুপ্রশস্ত সৈকত, সেই সঙ্গে নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য চমৎকার একটি স্থান।’
মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধবিহার: গঙ্গামতি সৈকতের নিকটে মিশ্রীপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরোনো সুউচ্চ বৌদ্ধবিহার। যার নাম মিশ্রীপাড়া লোকাসুখ বৌদ্ধবিহার। প্রায় শত বছর আগে এ অঞ্চলের রাখাইনদের পূর্বপুরুষ মিশ্রী তালুকদার এ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে ৩৫ ফুট উচ্চতার ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি। কেউ এখানে বেড়াতে এলে মন্দিরটি দেখতে ভোলেন না। মন্দিরের ঠিক উত্তর দিকে রয়েছে রাখাইনপল্লি। বাড়ির ঘরগুলো বাঁশের মাচানের ওপর। এই রাখাইনপল্লির দৃশ্যও চমৎকার। এখান থেকে তাদের তৈরি তাঁতবস্ত্র ও কারুশিল্প সামগ্রীও সংগ্রহ করা যায়।
যাতায়াতের সমস্যা আছে, উপরন্তু গঙ্গামতিতে পর্যটকদের থাকারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্থানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অবকাঠামোসহ গঙ্গামতির সার্বিক উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত মাস্টার প্ল্যান অনুমোদিত হলে গঙ্গামতিকে পরিপূর্ণভাবে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.