কাদের-লিমনরা কি মার খেতেই থাকবে?-নির্যাতকদের শাস্তি দিন

বৃহস্পতিবার মহামান্য হাইকোর্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র আবদুল কাদেরের ওপর নির্যাতন চালানোর দায়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডেইলি স্টার-এর খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আদালত আমলে নেন।

খিলগাঁও থানার পুলিশ দাবি করছে, ১৫ জুলাই রাত সাড়ে তিনটায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আবদুল কাদেরকে তারা খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ কাদেরের বক্তব্য হলো, তিনি ১৫ জুলাই রাতে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল কোয়ার্টারে খালার বাসা থেকে ফজলুল হক হলে ফেরার পথে সেগুনবাগিচায় সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাঁকে আটক করে। কোন বাড়িতে তাঁরা ডাকাতির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আরও কারা ছিলেন, কথিত গণপিটুনিতে কারা অংশ নিয়েছিল—সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। ডাকাতির দায়ে আটক মামুন নাকি তাঁকে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু সেই মামুনও কাদেরের নাম বলতে পারেননি। পুলিশের নির্যাতনের মাত্রা এত ভয়াবহ যে আদালতে কাদেরকে হাজির হতে হয়েছে হুইলচেয়ারের সাহায্যে।
আদালত হস্তক্ষেপ না করলে আবদুল কাদেরের ঘটনাটি কোথায় গড়াত, বলা কঠিন। এর আগে সহপাঠীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমলে নেননি। এটি দুঃখজনক। এভাবে অনেক নিরপরাধ মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিগৃহীত হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এর আগে ঝালকাঠিতে র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে পা হারিয়েছে লিমন নামের এক কলেজছাত্র। আমিনবাজারে গণপিটুনিতে নিহত ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধেও তারা ডাকাতির মামলা দিয়েছিল। পরে প্রমাণিত হয় যে, সেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। কাদেরের ঘটনাটি কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ বিভাগকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সব বিষয়ে যদি আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনই বা কি? কাদের-লিমনরা কি মার খেতেই থাকবে?
কাদেরের ওপর পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনাটি এতই মর্মবিদারক যে, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, একজন সাবেক মন্ত্রী এবং কাদেরের বিভাগীয় চেয়ারম্যানও তাঁর সহায়তায় আদালতে ছুটে গিয়েছেন। যে ছেলেটি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালান, তিনি ডাকাতি করতে পারেন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কথায় বলে, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা—কথাটি কাদেরের বেলায় অক্ষরে অক্ষরে সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের এই পরিণতি হলে পুলিশ সাধারণ মানুষকে কী পরিমাণ হয়রানি করতে পারে তা অনুমান করা কঠিন নয়।
আমরা আশা করব, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অবিলম্বে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটিত হবে। নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের অর্থে পরিচালিত পুলিশ বাহিনীর হাতে এভাবে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ নিগৃহীত হবে—তা মেনে নেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.