কৃষক যাতে বঞ্চিত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখুন-সরকারের চাল সংগ্রহ অভিযান

অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। এর নেতিবাচক ও ইতিবাচক—দুটো দিকই রয়েছে। ধান-চাল সংগ্রহ না করলে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আবার অভিযানের সুযোগে বাজারে ধান-চালের দাম বাড়ারও আশঙ্কা থাকে।

যে কারণে গত আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়নি।
শেষতক চলতি মৌসুমে সরকার যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচক বলেই মনে করি। প্রতি কেজি চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ টাকা। গত বছর ছিল ২৮ টাকা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন ব্যয় ১৪ টাকা ও চালের ২৪-২৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে ২৯ টাকা নির্ধারণ করা অযৌক্তিক নয়। বর্তমানে বাজারে যে দামে ধান-চাল বিক্রি হচ্ছে, তাকে অন্যায্য বলা যাবে না। তবে চালের সঙ্গে ধান সংগ্রহ করা গেলে কৃষক আরও উপকৃত হতেন। কেননা, তাঁরা সরাসরি চাল বিক্রি করেন না। মিলের মালিকদের কাছে কৃষক ধান বিক্রি করেন আর মালিকেরা তা চালে রূপান্তরিত করে বাজারে ছাড়েন। সরকার নিজে ধান না কিনলেও এর ন্যূনতম দাম বেঁধে দিতে পারে, যা ব্যবসায়ী ও চালকলের মালিকেরা মেনে নিতে বাধ্য।
এ বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি অনেকটাই কমে গেছে। সে ক্ষেত্রে সরকার চাল সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে পারত। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হবে বেশি দাম দিয়ে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আরও বেশি চাল সংগ্রহ করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হতো।
সরকারের কৃষিবান্ধব কর্মসূচির সুফল ইতিমধ্যে কৃষকেরা পেতে শুরু করেছেন। গত দুই বছর কৃষকদের সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। তবে বিদ্যুৎ-ঘাটতির কারণে কোথাও কোথাও সেচসুবিধা পেতে সমস্যা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও মনোযোগ আশা করি।
সারের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও বাড়বে। সেটি পুষিয়ে নিতে অন্যান্য উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। সময়মতো সার ও সেচসুবিধা দিতে পারলে ফসল যেমন ভালো হবে, কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও কম পড়বে। চাল সংগ্রহ-প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বচ্ছ। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে দাও মারতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.