সংসদেই আলোচনা হোক-হরতাল প্রত্যাহার করুন

প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের শরিক এবং আরও কয়েকটি দল কাল রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা যে হরতালের ডাক দিয়েছে, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? তারা এই হরতাল কী উপায়ে পালন করতে চায় কিংবা এর মধ্য দিয়ে কী অর্জন করতে চায়, তা স্পষ্ট নয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে উচ্চ আদালতের দেওয়া সাম্প্রতিক এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মন্তব্য করেন, এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সুযোগ আর নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণার প্রতিবাদে তারা গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রথমেই জিজ্ঞাসা: হরতালের এই কর্মসূচি কীভাবে পালন করা হবে? জনগণের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে: হরতাল মানেই ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত-সংঘর্ষ। হরতালের ডাক দিয়ে হরতাল আহ্বানকারীরা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার অপেক্ষায় বসে থাকেন না, সদলবলে রাস্তায় নেমে ‘পিকেটিং’-এর নামে জনজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ ঘটান। এর ফলে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুরো অর্থনৈতিক জীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যুক্তিসংগত কারণেই হরতাল কর্মসূচির বিরোধিতা করেন, তাঁরা এর বিকল্প কর্মসূচি দিতে বলেন।
বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের নেতারা যদি মনে করেন, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়ার উদ্যোগটি ঠিক নয়, তাহলে তাঁদের উচিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানানো। কিন্তু তা না করে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার নামে হরতালের মতো হঠকারী ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মসূচির ডাক দেওয়া তাঁদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়। হরতালের ডাক দেওয়ার আগে তাঁদের নিজেদের মনে প্রশ্ন আসা উচিত ছিল: যে জনগণ ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা সংসদে কী দায়িত্ব পালন করছেন? নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোর সব পথ খোলা থাকা সত্ত্বেও বিরোধী দল কেন দীর্ঘদিন ধরে সংসদের অধিবেশনগুলোতে অংশ নিচ্ছে না—আগে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, হরতাল প্রকৃত অর্থে সরকারের বিরুদ্ধে যায় না; যায় উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এবং চূড়ান্ত অর্থে জনসাধারণের বিরুদ্ধে। হরতাল ডেকে অর্থনীতির ক্ষতি করা, জনগণের জীবন-জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটানো, নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করা—এসবের পক্ষে কি কোনো জোরালো যুক্তি রয়েছে? হরতালের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের কথিত দাবি অর্জিত হবে—এটা কি তারা বিশ্বাস করে? নাকি তারা মনে করে, জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাই তাদের কাঙ্ক্ষিত পথ? এবং সে পথে এগোনোর সবচেয়ে সহজ পন্থাগুলোর একটি হচ্ছে হরতাল। কারণ, ডাক দিলেই হরতাল হয়ে যায়। সেটি গণতন্ত্রের পথ নয়। তাই বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি আমাদের আহ্বান: এই হঠকারী, অদূরদর্শী পথ থেকে সরে আসুন। রোববারের হরতাল প্রত্যাহার করে জাতীয় সংসদে ফিরুন। সেখানে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরুন।

No comments

Powered by Blogger.