সংসদে যাচ্ছে বিএনপি-কাল সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন খালেদা জিয়া

সংসদের চলতি অধিবেশনেই যোগ দিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ২৭ মার্চের মধ্যে অধিবেশনে যোগ না দিলে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। তাই সদস্যপদ রক্ষার জন্য হলেও এ অধিবেশনেই যাচ্ছে বিএনপি।

আগামীকাল রবিবার বিকেলে সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার কক্ষে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেছেন খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় আগামী রবি কিংবা সোমবার বিএনপি ও চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন।
বিএনপির এক নেতা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে খালেদা জিয়া সংসদে বক্তব্য দেবেন। বিএনপি রাজপথের পাশাপাশি জাতীয় সংসদেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব তুলে ধরবে বলে ওই নেতা জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সদস্য পদ রক্ষার জন্য নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের জোর দাবি নিয়ে বিএনপি শিগগিরই সংসদে যোগ দেবে। তবে কবে যোগ দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রবিবার বিকেলে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেছেন দলের চেয়ারপারসন। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি কখন যাব। সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' বিএনপির সংসদে যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি।
সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের মেয়াদ ছিল ৮ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে মেয়াদ চূড়ান্ত হয়নি। ২৯ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন চলতে পারে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ গত বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অধিবেশনের মেয়াদ কত দিন বাড়ছে, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে খালেদা জিয়া সংসদে অনুপস্থিত টানা ৮৩ কার্যদিবস। দলের অন্য সংসদ সদস্যদেরও সর্বোচ্চ গড় অনুপস্থিতি ৭৮ কার্যদিবস। সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। তাই চলতি অধিবেশনের মেয়াদ ২৯ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিএনপিকে সংসদে যেতেই হবে। এ বিষয় চিন্তা করেই আগামীকাল বিকেল ৪টায় খালেদা জিয়া বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেছেন। সংসদীয় দলের সভা সংক্ষিপ্ত হলে রবিবার সন্ধ্যায়, অন্যথায় পরের দিন সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সংসদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যেতে পারেন। গত ৮ মার্চ তাঁর ব্যাংককে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ১২ মার্চের মহাসমাবেশের কারণে তা হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশনে যোগ দিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রস্তুতির জন্য ঢাকায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদে গিয়ে কী ধরনের বক্তব্য দেওয়া হবে, তা নিয়ে রবিবার সংসদীয় দলের সভায় আলোচনা হবে। অধিবেশনে যোগ দিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সংসদে ঝড় তুলবেন বিরোধী দলের সদস্যরা।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের ৩০ কার্যদিবসসহ নবম জাতীয় সংসদ অধিবেশনের মোট কার্যদিবস ২৮৪। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও চারদলীয় ঐক্যজোটের সদস্যরা অনুপস্থিত ২৩৩ কার্যদিবস। নবম অধিবেশনে খালেদা জিয়া মাত্র ছয় কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ মার্চ সংসদে যোগ দেন তিনি। আর ২৪ মার্চ অষ্টম অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে চারদলীয় জোটের বেশির ভাগ সদস্য সংসদে যান। বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি ৮৩ কার্যদিবস। সংসদ সদস্য কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩) উপস্থিত ছিলেন ১১ কার্যদিবস। তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকায় স্পিকার তাঁকে ছুটি দিয়েছেন। সে হিসাবে ৯০ কার্যদিবস পার হলেও তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে না। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২) আটক থাকায় তিনিও স্পিকারের অনুমতি নিয়েছেন। এ জন্য তাঁর সদস্যপদও শূন্য হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.