দ্রুত চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়তে হবে-কার্যকর ড্যাপ অকার্যকর

রাজধানী ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এরপর গেজেটও হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবের কথায় ‘গেজেট প্রকাশের দিন থেকে ড্যাপ কার্যকর আছে’। আইনগতভাবে ড্যাপ নিশ্চয়ই কার্যকর আছে, কিন্তু বাস্তবে? যা কার্যকর আছে, সে অনুযায়ী কাজ হওয়াটাই হলো আসল কথা।

ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী রাখতে বিশেষজ্ঞদের করা এই বিশদ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। ক্ষুদ্র স্বার্থের চেয়ে রাজধানী ঢাকার স্বার্থ এবং এর ভবিষ্যৎই হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় বিবেচনা।
ড্যাপ প্রণয়ন এবং তা অনুমোদনের বিষয়টি শুরু থেকেই বিরোধিতার মুখে পড়ে। এর মূল কারণ, দীর্ঘদিন ধরে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে এই নগরের বিস্তার হয়েছে। ড্যাপ প্রণয়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে অতীতের এসব ভুলত্রুটি দূর করা এবং ভবিষ্যতে অপরিকল্পিত কিছু করা ঠেকানো। ড্যাপের সুফল পেতে হলে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষিভূমি, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও জলাশয় নষ্ট করে যেসব প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো অপসারণ করে সেই ভূমি উদ্ধার করা জরুরি। ড্যাপ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ ধরনের ১৬টি প্রকল্প ও ২৭২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপসারণের সুপারিশ করেছে। কাজটি কঠিন এবং এতে বাধা আসবে, তা স্বাভাবিক। ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য এর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিভিন্ন বাধা উপেক্ষা করেই সরকারকে এই কঠিন কাজটি করতে হবে।
ড্যাপ যেমন কার্যকর রয়েছে, পাশাপাশি সরকার এটা মূল্যায়ন ও চূড়ান্ত করার জন্য একটি মন্ত্রিসভা কমিটিও করেছে। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো পরিকল্পনা মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু ড্যাপের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই মন্ত্রিসভা কমিটি এ ব্যাপারে একেবারেই সক্রিয় নেই। বর্তমানে কার্যকর ড্যাপ বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ না থাকায় এবং অন্যদিকে তা মূল্যায়নের উদ্যোগও জোরালো না হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি একধরনের স্থবিরতার মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি হতাশাজনক।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে যে ১৬টি প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে ছয়টি প্রকল্প সরকারি। শুরুতেই সরকারের উচিত এই প্রকল্পগুলো বাতিলের ঘোষণা দেওয়া। সরকারকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে দৃষ্টান্ত স্থাপনের কাজটি করতে হবে। আর অন্য যে ১০টি বেসরকারি প্রকল্প সরিয়ে নিতে হবে, সেগুলোর অধিকাংশই অননুমোদিত হওয়ায় এই প্রকল্পগুলো বাতিল করে জমি পুনরুদ্ধারের কাজটি করা কঠিন হবে না। অন্যদিকে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলে ড্যাপের বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের মধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিতে হবে। পুরো কাজটি যেহেতু সময়সাপেক্ষ, তাই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে নেমে পড়তে হবে।

No comments

Powered by Blogger.