সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি-দুর্নীতি-অনিয়মের দায় কে নেবে?

বাংলাদেশে সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর জাতীয় সংসদে দেশের বাজেট পেশের সময় এডিপিও উপস্থাপন করা হয়। সংসদে রাজস্ব বাজেটের শুল্ককর প্রস্তাবসহ কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা হতে দেখি। এ হার বাড়ানো হলে সংসদের বাইরেও রাজস্ব বাজেট থাকে আলোচনায়।

কিন্তু উন্নয়ন বাজেট থেকে যায় আড়ালে। এটা কি পরিকল্পিতভাবেই করা হয়_ এমন প্রশ্ন বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। শুক্রবার সমকালে 'অনিয়ম-অদক্ষতায় বন্দি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন কিছু দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকেও কিন্তু এমন ধারণা করা যায়। সরকার বিশ্বব্যাংকের ঋণে 'এফিসিয়েন্ট লাইটিং ইনিশিয়েটিভ ফর বাংলাদেশ' নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। এর আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে সারাদেশে সাশ্রয়ী বাল্ব সরবরাহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। প্রকট বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু কাদের 'পাপে' লাখ লাখ নিম্নমানের বাল্ব সরবরাহ করে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই নস্যাৎ করে দেওয়া হলো? এ নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত যে, 'প্রকল্পটির প্রথম পর্বে অত্যন্ত নিম্নমানের বাল্ব সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় করা হয়েছে। ৬০ শতাংশেরও বেশি নষ্ট বাল্ব সরবরাহ করে বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে।' এ নিয়ে তদন্তে বাল্ব সরবরাহকারী চীনা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের দেশীয় সহযোগী কারা ছিল? তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কি-না জানা নেই। নিম্নমানের বাল্ব কিনে বিশ্বব্যাংক থেকে আনা ঋণের অর্থ নয়ছয় করা হয়েছে এবং এর সুবিধা ভোগ করেছে কিছু লোক। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সুদসহ আমাদের পরিশোধ করতে হবে। এ দায় কেন বাংলাদেশের জনগণ বহন করবে? এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, তাতে নির্বাচিত ঠিকাদারের ব্যাংক গ্যারান্টি ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এ কেলেঙ্কারির হোতা কে বা কারা, সেটা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা হয়নি। সময়মতো প্রকল্প সম্পন্ন না হওয়ায় সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহার পিছিয়ে যাবে। এভাবে বিদ্যুৎ বাঁচানোর লক্ষ্যও পিছিয়ে যাবে।
সমকালের উলি্লখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য 'কর্ণফুলী পানি সরবরাহ' প্রকল্পের কাজও সময়মতো শেষ করা যায়নি। জাপানি আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা সময়মতো ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারেনি। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক মহলের বিশেষ পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ মুখ্য হয়ে ওঠার কারণেই ঘরে ঘরে পানি সরবরাহের একটি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। এতে দাতারাও নাখোশ এবং তা সঙ্গত। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে শুধুু বিশ্বব্যাংক নয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং আরও কোনো দাতা সংস্থার স্বল্প হার সুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান স্থগিত রাখা হয়েছে। এতে দেশের যে ক্ষতি তার দায় কে নেবে?

No comments

Powered by Blogger.