শুভাকাঙ্ক্ষী ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দিন কাটল তিন প্রার্থীর by দিলীপ কুমার মণ্ডল

দীর্ঘ ১৮ দিন পর গতকাল কিছুটা বিশ্রাম পেলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে লড়াইয়ে থাকা তিন প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচার না থাকলেও প্রত্যেকের বাসায় ছিল নেতা-কর্মীদের ভিড়। এরই ফাঁকে ফাঁকে চলেছে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা। এভাবেই গতকাল সারা দিন কেটেছে তিন প্রার্থীর। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে আশা ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, একটি মহল নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসীদের এলাকা হিসেবে পরিচিত করতে চায়।

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলবে আশা করে মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। এদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, সেনা মোতায়েন না করা, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। তবে এর পরও তিনি মাঠ ছাড়বেন না।

নির্বাচনে সহিংসতা হবে না : শামীম ওসমান
শামীম ওসমান শহরের জামতলা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতেই দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। গতকাল সকাল থেকেই লোকজন ওই বাসায় ভিড় করতে থাকেন। একটু বিশ্রামে থাকার জন্য একপর্যায়ে সকাল পৌনে ১১টায় বেরিয়ে চলে যান উত্তর চাষাঢ়ায় ভাই সেলিম ওসমানের বাড়িতে। খবর পেয়ে সেখানেও ভিড় করেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও সংবাদকর্মীরা। পরে সেখান থেকে যান পাশেই তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। সেখানেও একই দৃশ্য।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শামীম ওসমান বলেন, '২০০১ সালে আমার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। তখন ২০ জন প্রাণ হারান। সেদিনই আমি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, অদৃশ্য বুলেট তাঁকেও তাড়া করে ফিরছে। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সেখানেও ২৩ জনকে জীবন দিতে হয়েছে। এখন আমার জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নিয়ে যারা উদ্দেশ্য খুঁজছে, এই প্রশ্নের একটাই জবাব হতে পারে_তা হলো আমাকে কি জীবন দিয়ে হামলার আশঙ্কা প্রমাণ করতে হবে?'
শামীম ওসমান বলেন, 'নারায়ণগঞ্জকে যারা সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিতি করতে চায়, তাদের বলব_এত দিন শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলেছে। কোনো একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করব নির্বাচনের দিনও কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। আর নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আল্লাহ ও জনগণ যাঁকেই নির্বাচন করুক না কেন, আমরা সবাই হাসিমুখে মেনে নেব।'

বিশৃঙ্খলা হলে দায় ইসির : আইভী
অপর মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী সারা দিন তাঁর দেওভোগের বাসায় সময় কাটান। তিনিও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন। মাঝেমধ্যেই তাঁর বাসায় হাজির হন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা। ফাঁকে ফাঁকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন আইভী। এ ছাড়া পোলিং এজেন্টের তালিকা তৈরির কাজ তিনি দেখভাল করছেন। তাঁর এজেন্টদের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেন এবং ইভিএম সম্পর্কে একটি ধারণা দেন। এ সময় তিনি জনগণকে সব ভয়-ভীতির ঊধর্ে্ব থেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ডা. আইভী বলেন, 'আমি আশা করি, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চায়।' জঙ্গি হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে জঙ্গি নেই। তাহলে আমরা কেন জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করব। তাহলে উনি কেন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কেউ যদি গণজোয়ারে বাধা দিয়ে অন্য কিছু করার চেষ্টা করে, তাহলে নারায়ণগঞ্জে মাগুরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।'

আমি মাঠ ছাড়ব না : তৈমূর
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সারা দিনই মাইসদার এলাকার নিজ বাসায় সময় কাটান। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেন। তৈমূর তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং মাঝেমধ্যে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিলেও সময়মতো সেনা মোতায়েন করতে না পারা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, সরকার সহযোগিতা না করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা সে কথা মানতে নারাজ। এর পরও আমরা নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে সরে দাঁড়াব না। এই ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের জনগণ আমাকে বিজয়ী করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।' একই সঙ্গে তিনি সব ভোটকেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন ও র‌্যাবের টহল নিশ্চিত করার দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.