তেল-গ্যাস রক্ষার আন্দোলন : প্রতিবাদ হ্যাঁ, হরতাল না

মুদ্রবক্ষে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র শতকরা ৮০ ভাগ রফতানির সুযোগসহ দুটি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে দেয়া ইজারা এবং মডেল পিএসটি ২০০৮ বাতিলের দাবিতে সোমবার তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বন্দর বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকে আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। হরতাল চলাকালে পল্টন থেকে জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর এবং প্রেসক্লাব পর্যন্ত এলাকা ছিল হরতাল সমর্থক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও পিকেটারদের দখলে। এলাকায় সব দোকানপাট ছিল বন্ধ। রাস্তায় যান চলাচল তেমন একটা করেনি।

তবে পল্টন ও এর আশপাশের এলাকা ছাড়া রাজধানীর অন্যত্র হরতালের ছাপ ছিল না বললেই চলে। হরতাল শেষে দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বন্দর বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটি সমুদ্র বক্ষের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র জাতীয় স্বার্থবিরোধী শর্তে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে যে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি সমর্থন রয়েছে এদেশের প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বিবেকবান মানুষের। দেশের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নিয়ে জাতীয় কমিটি যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, আমরা সেটাকে সমর্থন করি এবং অভিনন্দন জানাই। যে কোনো মূল্যে এই অসম চুক্তি বাতিলে সরকারকে বাধ্য করা না গেলে দেশের যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এ ব্যাপারে দেশবাসী সচেতন বলেই তেমন জোরালো সাংগঠনিক ভিত না থাকা সত্ত্বেও জাতীয় কমিটির ডাকা আধাবেলা হরতাল রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে হলেও পালিত হয়েছে। কিন্তু আমরা জাতীয় কমিটির দাবির প্রতি শতভাগ সমর্থন জানালেও তাদের হরতাল কর্মসূচিকে সমর্থন করতে পারছি না। আমরা আন্তরিকভাবেই হরতালের বিরুদ্ধে। হরতালের রাজনীতি এরই মধ্যে বিশেষ করে আমাদের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছে। বিশেষ করে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের শেষদিকে এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ কারণে-অকারণে একের পর এক হরতাল ডেকে রাজনীতির এই শাণিত অসত্রকে ভোঁতা করে ফেলেছে। বিশেষ করে এক-এগারোর আগের দিনগুলোতে লগিবৈঠা নিয়ে দেশকে অচল করার স্মৃতি মানুষ সহজে ভুলবে বলে মনে হয় না। আমরা দেখেছি, হরতাল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে, প্রকাশ্য রাজপথে লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করা যায়; কোনো প্রতিকার হয় না। হরতালের হিংস্রতা এবং হরতালজনিত কারণে সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগের ফলে জনগণের মধ্যে হরতালবিরোধী মনোভাব এখন অত্যন্ত প্রবল। অতিব্যবহার এবং অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ হরতাল কর্মসূচিকে একেবারে পচিয়ে ফেলেছে বলা যায়। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন। মন্ত্রীসহ এ দলের নেতারা বর্তমানে যেভাবে হরতালের অপকারিতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন, তাতে আমাদের মনে হয়, আওয়ামী লীগের মধ্যেও হরতাল নিয়ে এক ধরনের অনুশোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনুশোচনা যদি স্থায়ী হয় তবে ভবিষ্যতে হয়তো হরতালমুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী অবয়ব লাভ করবে। এই পটভূমিতে আমরা আশা করব, জাতীয় কমিটি তাদের দাবির পক্ষে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য হরতাল পরিহার করে মানববন্ধন, পথসমাবেশ, পদযাত্রাসহ অন্যান্য কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেবে।

No comments

Powered by Blogger.