গ্যাস সঙ্কট তীব্র হচ্ছে

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে গ্যাস সঙ্কট। পিক আওয়ারেও গ্যাস থাকছে না নগরীর অনেক এলাকায়। স্থানবিশেষে সকাল থেকেই অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে গ্যাসের চাপ। ফলে সময়মত রান্নাবান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে গ্যাস সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পানি তুলতে পারছে না ওয়াসা। নগরীতে পানির সঙ্কটও বেড়েছে আগের তুলনায়।

কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস সরবরাহের জন্য আন্দোলন করছেন বাসিন্দারা। রাজধানীর বাইরেও এ ধরনের আন্দোলন চলছে। কিন্তু সঙ্কট মোকাবিলায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ গত মাস থেকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী লাভ হলো দাম বাড়িয়ে? নগরীর সিএনজি ষ্টেশনগুলোতেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় গাড়ির বিশাল লাইন পড়ছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানায়। গ্যাসের এই সঙ্কট সম্পর্কে পেট্রোবাংলার তরফ থেকে বলা হয়েছে, এখন সারাদেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২২০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু পেট্রোবাংলা উৎপাদন করতে পারছে ১৯০ কোটি থেকে ১৯৫ কোটি ঘনফুট। উৎপাদন বাড়াতে না পারলে এই ঘাটতিজনিত সঙ্কট কাটবে না। এদিকে রাজধানীর গ্যাস সঙ্কটের কারণ সম্পর্কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীতে বর্তমানে তিতাস গ্যাসের চাহিদা ১৬০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তিতাস সরবরাহ করতে পারছে ১৪০ কোটি ঘনফুট। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, রাজধানীতে গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিক কম থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বেশিরভাগ এলাকার গ্যাসের পাইপ খুবই সরু। অনেক আগে বসানো এসব পাইপ বাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত চাপ সরবরাহ করতে পারছে না। নতুন করে মোটা পাইপ না বসালে গ্যাস থাকলেও চাপ বাড়ানো যাবে না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, রমজান মাসে ইফতারি, সাহরিতে দু'বেলার গ্যাস খরচ হয় এক বেলায়। এই অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে গিয়ে রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাস সঙ্কট বেড়ে গেছে। একই কারণে কমে গেছে গ্যাসের চাপ। শিগগির এ সমস্যার কোনো সমাধান হবে না বলেও হতাশা ব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, উদ্ভূত সঙ্কট কমাতে তিতাস গ্যাস রাজধানীর বাইরে যে দুটি কমপ্রেসার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তার কাজ শেষ করতে আরও আড়াই বছর সময় লেগে যেতে পারে। তার আগে সঙ্কট মোচনের সম্ভাবনা নেই। শিল্প-কারখানা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ সম্পর্কে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাপ প্রয়োজন কমপক্ষে ১২ পিএসআই। কিন্তু বেশিরভাগ কারখানায় চাপ থাকছে মাত্র দুই থেকে তিন পিএসআই। এদিকে গত মাস থেকে সব শ্রেণীর গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গড়ে দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ হারে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাণিজ্যিক গ্রাহক ও সার কারখানায়। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম চুলাপ্রতি বেড়ে ৪০০ টাকার জায়গায় হয়েছে ৪৫০ টাকা। আশা করা গিয়েছিল, এই দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে, সার্ভিসের মান বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো নানা হতাশার কথা শোনাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আসল সমস্যা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কম। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে বর্তমানে যে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে আপাতত তার সুষম বণ্টন অর্থাৎ সার্ভিসের মান বাড়ানো প্রয়োজন। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত গৃহস্থালি কাজে অনেক এলাকা সমতার ভিত্তিতে সরবরাহ পাচ্ছে না। বাড়তি টাকা দিয়ে বাড়তি সুবিধা পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকারকে তার দায় গ্রহণ করতে হবে বৈকি!

No comments

Powered by Blogger.