শামীম না আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো ফয়সালা হয়নি। এ নিয়ে দলের ভেতরে রীতিমতো এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শেষতক কে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন, সাবেক সাংসদ একেএম শামীম ওসমান নাকি সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী_
এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার একেএম শামীম ওসমান এবং ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জরুরিভিত্তিতে ঢাকায় ডেকে আনেন।
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দুই প্রার্থীর সঙ্গে আলাদাভাবে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। তবে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য দুই প্রার্থীকেই নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর আলোচনাকালে গণভবনে দলের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার জিয়াউদ্দিন বাবলু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শামীম ওসমান দলের সমর্থন ছাড়া নির্বাচন করবেন না বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী পরোক্ষভাবে বলেছেন, দলের সমর্থন না পেলেও তিনি নির্বাচনে লড়বেন। প্রথমে আলাদা হলেও পরে দু'জনের সঙ্গে একত্রে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাত সোয়া ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
একেএম শামীম ওসমান গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে গণভবনে আসেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী আসেন রাত ৮টা ৫ মিনিটে। তাদের সঙ্গে কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। তারা দু'জনই দলীয় প্রার্থিতা পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। দুই নেতা গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দু'জনই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে অনড়। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইছেন না। দলীয় মনোনয়ন পেতে দু'জনই শেষ মুহূর্তের দেন-দরবার করছেন।
এ অবস্থায় বড্ড বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা। তারাও নড়েচড়ে বসেছেন। কয়েকজন রোববার দিনভর নানা তৎপরতা চালিয়েছেন। একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করেছেন। কেউ কেউ একেএম শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু সমাধান আসেনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও নাসিক নির্বাচনে একক প্রার্থী মনোনয়নের বিষয় নিয়ে গতকাল দলের কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।
নাসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১২ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী এর আগেই হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা করে দেবেন বলে নেতারা মনে করছেন। আর সমঝোতা হলে যে কোনো একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। সে ক্ষেত্রে দলের আরও দুই প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এসএম আকরাম এবং আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ কাঁচপুরী দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন।
এদিকে একেএম শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত জানার জন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সদুত্তর পাননি।
নারায়ণগঞ্জেও ছিল একই চিত্র। স্থানীয় চাষাঢ়া শহীদ জিয়া হলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভিড় জমিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক। তারা গণমাধ্যমকর্মীদের দেখামাত্রই ছুটে গিয়ে জানতে চেয়েছেন, কে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন_ শামীম ওসমান নাকি আইভী।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নীতিনির্ধারক। আবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর টেলিফোন বার্তার মাধ্যমে নেতাদের দোয়া চেয়েছেন দুই প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। এর আগে একক প্রার্থী বাছাইয়ে ম্যানেজ ফর্মুলা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে একেএম শামীম ওসমান বেশ এগিয়ে আছেন। দলের বেশিরভাগ নীতিনির্ধারক নেতার আশীর্বাদ তার পক্ষে। তবে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মাইনাস করে শামীম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া খুব একটা সহজ হবে বলে মনে করছেন না শীর্ষ নেতারা।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একেএম শামীম ওসমানের মতো ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীরও রয়েছে শক্ত ভিত্তি। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণেই সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ম্যানেজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একেএম শামীম ওসমানের বিজয় শতভাগ নিরাপদ করতে হলে আইভীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে তাকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
অবশ্য এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি উল্টো প্রস্তাব দিয়ে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বদলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে একেএম শামীম ওসমানকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক। এ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরী।

No comments

Powered by Blogger.