মাছ ধরায় মা-ছেলেকে পেটালেন পৌর মেয়রের ভাই

পায়রা নদীর একাংশে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম লেকের। সেই লেকে মাছ ছেড়েছেন পৌর মেয়রের ভাই। না বুঝে ওই লেকে মাছ ধরার অপরাধে এক কিশোর পৌর মেয়রের ভাই-ভাগ্নের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন ওই কিশোরের মা-ও। নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি সরকারদলীয় ওই মেয়রের ক্যাডার বাহিনী। মা-ছেলেকে চিকিৎসাও নিতে দেয়নি তারা। নির্যাতিতরা থানায় মামলা তো দূরের কথা, ভয়ে আত্মগোপন করে আছে।
 বরগুনার আমতলী পৌর এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা। নির্যাতনকারীরা হলেন_আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের ভাই সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মজিবর রহমান ও ভাগ্নে ছাত্রলীগকর্মী আবুল কালাম আজাদ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম দেলোয়ারের ছেলে পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুছাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। নির্যাতিতরা হচ্ছেন_পৌর এলাকার মজিরব রহমানের স্ত্রী শিউলী বেগম ও ছেলে শওকত হোসেন মিরাজ। মিরাজ আমতলী এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। বছরখানেক আগে অন্য একটি বিষয়ে সালিসের নামে শিউলী বেগমকে প্রকাশ্যে মারধর করেছিলেন কমিশনার মজিবর রহমান।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিউলী বেগম গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর ছেলে শওকত হোসেন মিরাজ গত বৃহস্পতিবার স্কুল শেষে ওই লেকে মাছ ধরে। লেকের মাছ চুরির অভিযোগ এনে জালসহ মিরাজকে মেয়রের ভাগ্নে আজাদ তুলে নিয়ে যান। একপর্যায়ে মজিবর রহমান তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। স্থানীয়রা মিরাজের চিৎকার শুনে তাঁকে (শিউলী) জানান। ঘটনাস্থলে গিয়ে শিউলী বেগম মেয়রের বাড়ির উঠানে একটি গাছের সঙ্গে ছেলেকে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে মজিবর তাঁকেও মারধর করেন। পরে তাঁদেরকে বাঁচাতে এসে শিউলীর মা ফাতেমা বেগম, বোন বিউটি বেগম, ভাগ্নে ফয়সাল সরদারও মারধরের শিকার হন। পরে মা ও ছেলে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েচিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুছা তাঁর দলবল নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েএসে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেন। হুমকির কারণে শুক্রবার সকালে তাঁরা চিকিৎসা না নিয়েই হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। শনিবার পালিয়ে এসে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হন।
মারধরের কথা স্বীকার করেছেন মজিবর রহমান। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'শিউলী ও তাঁর ছেলেকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল মীমাংসার জন্য। কিন্তু তাঁরা পালিয়ে বরিশালে চিকিৎসার জন্য গেছে বলে শুনেছি।' ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আমতলী পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুছা বলেন, 'মেয়রের ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিবেশী শিউলী বেগমের ঝগড়া বেধেছিল। তখন শিউলী বেগম বাজে মন্তব্য করায় মেয়রের ভাগ্নে আজাদ তাঁকে মারধর করেছে। এতে তিনি সামান্য ব্যথা পেয়েছেন। ঘটনার দিন তিনি স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি হয়েছেন। আমি নিজেই তাঁর চিকিৎসা ভার গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক এক হাজার টাকা সাহায্য করেছি। বিষয়টির মীমাংসা চলছে।'

No comments

Powered by Blogger.