প্রশাসনের শীর্ষ পদে পরিবর্তন

নপ্রশাসনের শীর্ষ পদে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একই পদমর্যাদার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সচিবের দপ্তর বদল করা হয়েছে। গতকাল রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব নিয়োগ ও রদবদলের অফিস আদেশ জারি করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. আবদুল আজিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে গত বৃহস্পতিবার অবসরে যান। তিনি ২০০৮ সালে এ পদে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর দুই দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে এ পদে তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিমও একই দিনে অবসরে গেছেন। তাঁর চুক্তির মেয়াদ গত ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ায় তাঁর মেয়াদ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
মোশাররাফ হোসাইন ভঁূইঞা ২০তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি ১৯৮১ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছে জনপ্রশাসনের সবচেয়ে শীর্ষপদ। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ১৯৫৮ সাল থেকে এ রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। মাঝখানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এক মাসের জন্য এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছিল। বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. সা'দত হোসাইনকে ডিঙিয়ে কামালউদ্দিন সিদ্দিকীকে তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনে অসন্তোষের কারণে পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে ড. সা'দত হোসাইনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আর রীতি ভাঙেনি সরকার।
কিন্তু এবার রীতি ভেঙে নিয়মিত কর্মরত জ্যেষ্ঠ সচিবকে (চুক্তিভিত্তিক নয়) ডিঙিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগ করা হয়েছে। কারণ পানিসম্পদ সচিব শেখ ওয়াহিদ-উজ-জামান জ্যেষ্ঠ হলেও তাঁকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়নি। তিনি ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের একমাত্র কর্মকর্তা। ১৯৭৯ সালে 'সচিবালয় ক্যাডার' হিসেবে চাকরিতে যোগ দিলেও ১৯৯৪ সালে তাঁর ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারে যুক্ত হয়। রীতি অনুযায়ী তাঁকেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগ করার কথা। কিন্তু নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা মোশাররাফ হোসাইন ভঁূইঞা (১৯৮১ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম)।
সরকারের একাধিক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, মুখ্য সচিব পদটিকে জনপ্রশাসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমমানের ধরা হলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবই শীর্ষপদ। 'ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স'-এর ক্রমানুসারে ১২ নম্বরে প্রথম রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মুখ্য সচিব। এই দুই সচিবের অবস্থান সংসদ সদস্যদের ওপরে। অন্যান্য সচিবের পদমর্যাদার তুলনায় মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের পদ চার ধাপ ওপরে।
ওয়াহিদ-উজ-জামানকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব না করে মুখ্য সচিব করা প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে শীর্ষপদ ধরা হলেও মুখ্য সচিব পদটিও একই মর্যাদার। সুতরাং ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব না করলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই।'
মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা তিন দশক ধরে সিভিল সার্ভিসে কাজ করছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব পদে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) নির্বাহী পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি চরম নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।' তিনি এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা চেয়েছেন। ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শেখ ওয়াহিদ-উজ-জামান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আগে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তিনি কালের কণ্ঠের কাছে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন।
গতকাল আরো পাঁচ সচিবের দপ্তর বদল করা হয়। তার মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব ইকবাল মাহমুদকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে বদলি করা হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদারকে জনপ্রশাসন সচিব পদে বদলি করা হয়। বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদার) ফজলে কবিরকে রেলপথ বিভাগের সচিব এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মনজুর হোসেনকে স্বরাষ্ট্রসচিব করা হয়। একই দিনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) ভুঁইয়া সফিকুল ইসলামকে পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে নিয়োগ করা হয়। সচিব পদে শিগগিরই আরো রদবদল হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। কারণ ওয়াহিদ-উজ-জামান মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদটি শূন্য হয়েছে। একইভাবে বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর মহাপরিচালক পদও শূন্য।

No comments

Powered by Blogger.