মিরসরাই থানার ওসির বিরুদ্ধে বিনা দোষে জেলে পাঠানোর আরো অভিযোগ

নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধরে জেলে পুরে দেওয়ার আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসানের বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পাতায় নিরপরাধ কলেজছাত্র আরিফকে জেলে পাঠানোর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে ফোনে অনেকেই নিজেদের পুলিশের রোষানলের শিকার দাবি করে এসব অভিযোগ করেন।
মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় গ্রামের মৃত বশির আহাম্মদের ছেলে জসীম উদ্দিন বলেন, 'আমি সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। একদিন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। একই কায়দায় আরো সাতজনকে ধরে থানা হাজতে রাখে সারা রাত। ভোরে অন্য স্থান থেকে চোলাই মদ নিয়ে আসে পুলিশ। মদখোর আখ্যা দিয়ে আমাদের জেলে পাঠিয়ে দেয়।' অভিযোগে জানা যায়, ৩২ দিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন জসীম উদ্দিন। কোনো অপরাধ না করেও অন্ধকার কারাগারে থাকার নানা যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে জসীম প্রশ্ন করেন, 'মিরসরাই থানার ওসি কি পারবেন আমার জীবনের ৩২টি দিন ফেরত দিতে? এই সময়টা আমার স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কষ্টে কাটিয়েছে। এখনো প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।'
মিরসরাই থানা পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নিরপরাধ ব্যক্তিদের আটক করে নানা অজুহাতে জেলে পাঠানোর অভিযোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পদোন্নতির উদ্দেশ্যে কিছু নিরীহ প্রকৃতির ব্যক্তিকে তারা আটক করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়াধীন মামলায় তাদের সন্দেহভাজন আসামি আখ্যা দিয়ে আদালতে পাঠায়। এর সর্বশেষ প্রমাণ মিরসরাই সদর ইউনিয়নের আরিফ উদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মতে, গত ১১ এপ্রিল কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় বিশেষ অভিযানের নামে মিরসরাই থানা পুলিশের মাদক কারবারি ধরে বেপরোয়া বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট সাত পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন বিভাগ। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। ওই ঘটনায় এসআই ফেরদৌসকে অন্য থানায় শাস্তিমূলক বদলিও করা হয়। এরই মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল রাতে মাদক কারবারি ধরতে গিয়ে খুন হন মিরসরাই থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বোরহান উদ্দিন। দুই ঘটনার জের ধরে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরসহ একসঙ্গে ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। ১১ মে নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদে যোগ দেন ইফতেখার হাসান। তাঁর যোগদানের কয়েক দিন পর থেকেই নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধরে জেলে পাঠানোর অভিযোগ আসতে থাকে। তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি ইফতেখার হাসান কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিকে
ওসির হুমকি
কালের কণ্ঠের মিরসরাই প্রতিনিধি মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন থানার ওসি ইফতেখার হাসান। পুলিশের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হলে গতকাল রবিবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে তিনি এ হুমকি দেন।
গতকাল কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় 'নিরপরাধ জেনেও আরিফকে ফাঁসিয়ে দিল পুলিশ' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ক্ষিপ্ত হন ওসি ইফতেখার হাসান। প্রকাশিত সংবাদটি দেখে আরো অনেক স্থান থেকে অনুরূপ অভিযোগ আসতে শুরু করে। জসীম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে বিনা অপরাধে জেলে পাঠানো হয়েছে_এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে ওসি সরাসরি বলেন, 'আমি আপনার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেব না। আপনার সঙ্গে কথাও বলব না। আপনি যা খুশি লিখে দেন। আমি আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।' এ কথা বলেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওসি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণ জানতে আবার ফোন করা হলে তিনি 'আপনার কিছু লেখার থাকলে লিখে দেন' বলে আবারও ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.