কাঠগড়ায় আম্পায়ারিং

বিশ্বকাপ সামনে বলে চলতি প্রিমিয়ার লিগ এমনিতেই আলোচিত। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ভালো পারফরম্যান্সের কারণে সেই আলোচনায় যখন স্বাস্থ্যকর হাওয়া, তখন লিগ নিয়ে একটি অস্বাস্থ্যকর আলোচনাও ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। আলোচনাটা আম্পায়ারিং-সংক্রান্ত।
বিমান বনাম কলাবাগান কালকের ম্যাচের মতো এবার লিগের অনেক ম্যাচই আম্পায়ারিংয়ের কারণে উত্তপ্ত হয়েছে। অভিযোগ আছে মাঠের বাইরে থেকে আম্পায়ারদের প্রভাবিত করার, অভিযোগ অজস্র ভুল সিদ্ধান্তেরও। কখনো কখনো বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণ করছেন খেলোয়াড়েরা। জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ অনেক ক্রিকেটারকেই তাই গুনতে হচ্ছে জরিমানার টাকা, হতে হচ্ছে বহিষ্কার। মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু যাঁদের কারণে ম্যাচ পরিচালনায় এই অব্যবস্থাপনা, তাঁদের শাস্তি দেবে কে?
এ ব্যাপারে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান মাহমুদ জামালের সহজ-সরল জবাব, ‘আমাদের যোগ্য আম্পায়ারের সংকট আছে। তাই কোনো আম্পায়ারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসলেও কিছু করার থাকে না। তাকে আবার ম্যাচ দিতে হয়।’
আম্পায়ার্স কমিটির প্রধানের কথায় মনে হতে পারে তিনি পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ করে আছেন! বাস্তবতা ভিন্ন। উল্টো অভিযোগ আছে, আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান হয়েও ‘অযোগ্য’ আম্পায়ারদের লালন-পালন করছেন মাহমুদ জামাল! বিসিবিতে এখন বেতনভুক্ত আম্পায়ার ৬ জন—নাদির শাহ, এনামুল হক, মাহফুজুর রহমান, মিজানুর রহমান, তানভীর আহমেদ ও শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। এর মধ্যে মাসে ৪০ হাজার টাকা করে বেতন পান নাদির, এনামুল ও শরফুদ্দৌলা। বাকিদের বেতন ৩০ হাজার টাকা করে। মাহমুদ জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগটা শেষের দলের মিজানুর রহমানকে ঘিরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের প্রিমিয়ার লিগে কাল পর্যন্ত যে ৪৫টি ম্যাচ হয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটা ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন মিজান। সাকিবের ১০ হাজার টাকা জরিমানা হওয়া সেই মোহামেডান-বিকেএসপি ম্যাচটিও ছিল বিতর্কিত। এ ছাড়া চলতি ২০১০-১১ মৌসুমের জাতীয় লিগের ওয়ানডে টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচেই অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন না তিনি। কেবল বগুড়ায় হওয়া ঢাকা-খুলনা ম্যাচে রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন। শুধু এ বছরই নয়, ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে বেতনের আওতায় আসার পর গত প্রায় আড়াই বছরে মিজান আম্পায়ার ছিলেন হাতেগোনা কিছু ম্যাচে। বেতনভুক্ত আম্পায়ার হওয়ার পরও কেন তাঁকে ম্যাচ দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য মাহমুদ জামাল নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন মিজানের যোগ্যতা নিয়ে, ‘ওনার আম্পায়ারিংয়ের মান খারাপ। অনেক ক্লাবই অভিযোগ করে, তার ম্যাচগুলো বিতর্কিতও হয়ে পড়ছে নানা কারণে। সে কারণেই তাকে ম্যাচ কম দেওয়া হয়।’ মাহমুদ জামালের বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে না চাইলেও কাল টেলিফোনে আম্পায়ার মিজান বলেছেন, ‘আমি কেন ম্যাচ কম পাই সেটা তো আমি জানি না। এটা আম্পায়ার্স অ্যালটমেন্ট কমিটি ভালো বলতে পারবে।’
যাঁর যোগ্যতা নিয়ে খোদ আম্পায়ার্স কমিটিতেই প্রশ্ন, তিনি কেন বসে বসে বেতন নিচ্ছেন বোর্ড থেকে? অভিযোগ আছে, আম্পায়ার্স কমিটির প্রধানকে ‘খুশি’ করেই নাকি সুবিধাটা নিচ্ছেন তিনি। মাহমুদ জামাল অবশ্য সেটি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বেতনের ব্যাপারটা প্রশাসন দেখে।’ কিন্তু আম্পায়ার হিসেবে মিজানের পারফরম্যান্স যে প্রশ্নবিদ্ধ, সেই তথ্য কি বিসিবির প্রশাসনকে জানিয়েছে আম্পায়ার্স কমিটি? বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহমেদ পরিষ্কার করেই দিয়েছেন প্রশ্নটার উত্তর, ‘না, এ রকম কিছু আমাদের কেউ বলেনি। উনি (মিজান) যে কমিটির অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত সে কমিটি থেকে তাঁকে বাদ না দেওয়া হলে তো আমরা বেতন বন্ধ করতে পারি না।’ প্রধান নির্বাহী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, আম্পায়ারদের জন্য একটা নীতিমালা হচ্ছে। সেটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে সমাধান হবে এসব সমস্যারও।
শুধু এই একজন আম্পায়ারই নন, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও অনেক আম্পায়ারের আম্পায়ারিংই প্রশ্নবিদ্ধ। আম্পায়ারদের নীতিমালা এই অভিশাপ থেকে দেশের ক্রিকেটকে বাঁচাতে পারলে ভালো। ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা’ প্রশ্নটা যে নইলে থেকেই যাবে!

No comments

Powered by Blogger.