এবার মেসির আরাধনা, আর্জেন্টিনার সাফল্য

একে একে সবই হলো। ২০০৫ সালে সিনিয়র দলে ক্যারিয়ার শুরু করার মাত্র দুই বছরের মধ্যেই নিজেকে সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারে পরিণত করেছেন লিওনেল মেসি। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবারই ছিলেন ফিফার বর্ষসেরা তিন খেলোয়াড়ের তালিকায়। আর গতকাল টানা দ্বিতীয়বারের মতো তাঁর মাথায় উঠল ফিফা বর্ষসেরার মুকুট। ক্লাব দল বার্সেলোনাকে লা লিগায় চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাও নিয়ে গেছেন ন্যু-ক্যাম্পে। একটা খেলোয়াড়ের জীবনে যা যা পাওয়ার কথা তার মোটামুটি সবই এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। তবে একটি না পাওয়ার বেদনা তাঁকে প্রতিনিয়তই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তাঁর সেই না পাওয়ার বেদনা যে বিশ্বকাপকে ঘিরে, তা আর বোধ করি নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মেসি নিজেও এ নিয়ে আফসোস করেছেন। স্বীকার করেছেন, ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সাফল্যের মুখ দেখতে না পারাই তাঁর সবচেয়ে বড় ‘অপ্রাপ্তি’।
গত বছর বিশ্বকাপটা এসেছিল মেসির জন্য কি অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ারই উপলক্ষ হয়ে? সবাই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিল মেসির দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের। কিন্তু তাঁদের হতাশই হতে হয়েছে। তাঁর পা থেকে আসেনি একটি গোলও। দলও কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হেরে লজ্জাজনকভাবেই বিদায় নিয়েছে। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসির যে পারফরম্যান্স তার ছিটেফোঁটাও ছিল না বিশ্বকাপে মেসির খেলায়।
তবে, পুরো ব্যাপারটিকেই পদ্ধতিগত সমস্যা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময় মেসিকে গোল তৈরি করার চেয়ে গোল করার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে পুরো দলেরই ভার চলে আসে মেসির কাঁধে। বিশ্বকাপে মেসির গোল না পাওয়ার প্রধানতম কারণ হিসেবে অনেকে এ ব্যাপারটিকেই চিহ্নিত করেছে। অনেকে দুষেছেন কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। বার্সেলোনায় পেপ গার্দিওলা সব সময়ই মেসিকে স্বাধীনভাবে খেলতে দেন, কিন্তু বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ম্যারাডোনা মেসির জন্য স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র তৈরি করতে পারেননি। গত বছরের এপ্রিলে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে আর্সেনালের বিপক্ষে তাঁর চার গোলের ম্যাচটি আর বিশ্বকাপের যেকোনো একটি ম্যাচ পাশাপাশি দেখলে যেকোনো মেসিভক্তই পেয়ে যাবেন এর সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ।
মেসি নিজেও তাঁর বার্সেলোনা সতীর্থদের অবদানের কথা স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। এবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটা তাঁর বার্সা সতীর্থ জাভি বা ইনিয়েস্তারই জেতা উচিত, এমন কথা তিনি অনেকবারই বলেছিলেন। গতকাল এই বার্সেলোনা ত্রয়ীর কোচ পেপ গার্দিওলা শেষ পর্যন্ত বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে মেসির নামটা উচ্চারণ করার পর বেশ অবাকই হয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই পুরস্কারটা আমার সতীর্থদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। তাদেরকে ছাড়া আমি এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না।’
পুরস্কারটা নেওয়ার পর মেসি ধন্যবাদ দিয়েছেন সব আর্জেন্টাইন সমর্থককেও। এ বছর নিজেদের দেশে আয়োজিত কোপা আমেরিকাতেই নিশ্চয়ই মেসি তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন শিরোপাটা জিতে সব দুর্নাম ঘুচিয়ে দেওয়ার। বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জয়সূচক অসাধারণ এক গোল করে কিন্তু সেই ইঙ্গিতও দিয়ে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন জাদুকর।

No comments

Powered by Blogger.