বিমানের হজ ফ্লাইট -নিরবচ্ছিন্ন ফ্লাইটের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে

আগামী ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট। এবারের হজযাত্রীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সুষ্ঠুভাবে এত হজযাত্রী পরিবহন এবং এর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তাই বাড়তি মনোযোগের দাবি রাখে। বিমানসহ দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে প্রায় ৯৪ হাজার যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এর পরও শঙ্কায় আছে বিমান মন্ত্রণালয়। কেন? কারণ হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে মন্ত্রণালয়, বিমান কর্তৃপক্ষ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি একধরনের বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সব পক্ষ মিলে এত বড় একটি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবে—এটাই যেখানে প্রত্যাশিত, সেখানে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও কমিশনের বিষয়টিই সবকিছুর ওপর স্থান পাওয়ায় আজ এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
এবারের মোট হজযাত্রীর মধ্যে ৪৭ হাজার ৬৮৪ জন পরিবহন করবে বিমান। বাকি যাত্রী পরিবহন করবে অন্য আটটি এয়ারলাইনস। বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী পরিবহন নিয়ে কোনো সমস্যার আশঙ্কা করছে না কেউ। হজযাত্রী পরিবহনের জন্য বিমান নিজেদের উড়োজাহাজের বাইরে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া করেছে। বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, যা প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু নিজেদের মধ্যেই যদি বিরোধ ও স্বার্থের সংঘাত থাকে, তবে ঝামেলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বিরোধের কারণ একটি বিশেষ উড়োজাহাজ ভাড়া করাকে কেন্দ্র করে। বিমানের একটি মহল চেয়েছিল নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারের একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কারণ তাদের মতে, ২৪ বছরের পুরোনো এই বিমান ত্রুটিপূর্ণ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজের অনুমতি তারা দেবে না। এই উড়োজাহাজ এর আগেও ভাড়া করা হয়েছিল এবং এ নিয়ে কাবো এয়ারের সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তাও খুব ভালো নয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয় আবার এই উড়োজাহাজের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিমানের একটি অংশের পাশাপাশি সংসদীয় কমিটিও কাবো এয়ারের উড়োজাহাজটি আবার ভাড়া নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধ চরমে ওঠে। একটি বিশেষ উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পক্ষে এই কট্টর অবস্থান খুব স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাবো এয়ারের উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে কমিশন-বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও উড়িয়ে দেওয়া কঠিন।
হজ ফ্লাইট বা বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চালানোর জন্য যদি আরও উড়োজাহাজ ভাড়া করতে হয়, তবে নিশ্চয়ই তা করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একটি বিশেষ উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার জন্য কেন এত উঠেপড়ে লাগা? ভাড়া নেওয়ার জন্য আর কোনো উড়োজাহাজ নেই? সংসদীয় কমিটি গত সপ্তাহে এবারের হজ ফ্লাইট সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে কি না, সে আশঙ্কা প্রকাশ করে আবারও কাবো এয়ারের উড়োজাহাটি ভাড়া করার সুপারিশ করে। বোঝা যাচ্ছে, কাবো এয়ারের কাছ থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে একটি মহলের বিশেষ উৎসাহ রয়েছে। এই উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া না হলে ওই মহল হজ ফ্লাইট নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করতে চাইবে বা করার চেষ্টা করবে; এমন আশঙ্কা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আমরা মনে করি, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে, তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া সরকারের নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব। হজ ফ্লাইট একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এ নিয়ে কেউ যাতে কোনো কারসাজি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে বিমান নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের এই যে অপতৎপরতা, তার একটা বিহিত করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.