শেয়ারবাজারে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার ওপরে

দেশের শেয়ারবাজারে চাঙাভাব অব্যাহত। প্রতিদিনই বাড়ছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণও এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এদিকে গতকাল ডিএসই ৫০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোনো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, বাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রাইভেট প্লেসমেন্ট অনুমোদন না করারও সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে শিগগিরই এ সংক্রান্ত সুপারিশগুলো পাঠাবে ডিএসই।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কম পরিশোধিত মূলধনের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে অস্বাভাবিককতা লক্ষ্য করা যায়। মূলধনের পরিমাণ কম থাকায় এসব কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির যথেষ্ট সুযোগ থাকে। তাই মূল্য কারসাজি ঠেকাতেই কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো এর আওতায় পড়বে না।
কিন্তু ডিএসইসহ সব মহল থেকে যখন বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন, দেশে ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত অনেক কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা হবে না। ফলে এ সিদ্ধান্ত ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার আশঙ্কা রয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গতকাল সাধারণ সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে তিন হাজার ২১৫ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে, যা এযাবত্কালের সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০০৮ সালের ১ জুন সাধারণ সূচক একবার তিন হাজার ২০৮ পয়েন্ট হয়েছিল। তবে ওই সময় বাজারের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এসইসির কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ সূচক আর বাড়তে দেয়নি।
এরপর থেকে সূচক তিন হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করার পরই বাজার নিম্নগামী হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের লেনদেনে বাজার সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে দেখছেন ইতিবাচক হিসেবেই।
যোগাযোগ করা হলে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামীণফোনের কারণে বাজারে সূচকের পতন হতে পারে বলে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে ধারণা ছিল। প্রকৃতপক্ষে বাজারে সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় হঠাত্ করেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সূচক বাড়ছে।
তবে কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরিফ খান আরও বলেন, এখনো ভালো মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম যথেষ্ট কম রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত সেদিকেও লক্ষ রাখা।
বাজার পরিসংখ্যান: ডিএসইতে গতকাল ৯২৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৩টি কোম্পানির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল চারটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সার্বিক মূল্যসূচক ৭৭ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৭১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ৯৪টির, কমেছে ৭৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

No comments

Powered by Blogger.