বদলে যাওয়া নায়কের গল্প

ক্যারিয়ারের শুরুতে ঢাকাই ছবির চকোলেটবয় হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ছেলে চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। তবে এ পরিচয় ভাঙতে বেশি সময় নেননি এ তারকা। অভিনয়ে নিজেকে ভাঙার অভিযানে সুদৃঢ়ভাবেই পথ চলেছেন এ নায়ক। সাফল্যও পেয়েছেন। যে সাফল্য তাকে সামনের পথ চলতে সহায়তা করেছে। এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলচ্চিত্রে তাই রোমান্টিক, আবার কখনও অ্যাকশন নায়ক হিসেবে আজকাল হাজির হচ্ছেন তিনি। বাপ্পীর শুরুটা কিন্তু হয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিই তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তবে জাজের মাধ্যমে সিনেমায় পথচলা শুরু হলেও নিজেকে একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আটকে রাখেননি তিনি। সবার নায়ক হতে চেয়েছেন। হয়েছেনও। বর্তমানে বাপ্পী চৌধুরী মানেই যেন প্রেক্ষাগৃহে ভিন্ন ভিন্ন প্রযোজনা সংস্থার আশাবাদী ছবি। তাই জাজ থেকে বের হয়ে অন্যরকম ভালোবাসা, জটিল প্রেম, রোমিও, প্রেম প্রেম পাগলামি, তবুও ভালোবাসি, কি প্রেম দেখাইলা, ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম, কি দারুণ দেখতে, হানিমুন, অনেক সাধের ময়না, লাভ স্টেশন, দবির সাহেবের সংসার, আই ডোন্ট কেয়ার- প্রতিটি ছবিতেই দর্শকরা বাপ্পীকে ভিন্ন চরিত্রে দেখতে পেয়েছেন। গণ্ডি থেকে বের হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা প্রসঙ্গে বাপ্পী বলেন, ‘বিষয়টি তো সবাই জানেন। আমি কখনোই নিজের ক্যারিয়ার এক জায়গায় বন্দি করতে চাইনি। সবার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। করছিও। যার ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। সম্প্রতি এ নায়ক অভিনীত ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে আরশাদ আদনান প্রযোজিত ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ নামে একটি ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। ছবিটিতে বাপ্পীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন আঁচল। নাটকের নির্মাতা হলেও ছবিটি দেখার পর বোদ্ধামহল থেকে নির্মাতা- সবাই প্রশংসা করেছেন। সঙ্গে প্রশংসিত হচ্ছেন ছবির প্রধান চরিত্র বাপ্পী ও আঁচল। ছবিটি প্রসঙ্গে বাপ্পী বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে বড় একটি প্রাপ্তি যোগ হয়েছে তা হল- সমসাময়িক চরিত্রের বাইরে গ্রামের সুলতান নামের একটি চরিত্রে আমার অন্তর্ভুক্তি। পুরো চলচ্চিত্রের গল্প এবং কাজ যে মানের তাতে আশা করছি যারা একবার চলচ্চিত্রটি দেখবেন তারা দ্বিতীয়বার আবার হলে যাবেন।’ ‘আমাদের গল্পে আমাদের ছবি’ এই স্লোগান নিয়ে সারা দেশের ৫০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সুলতানা বিবিয়ানা। ছবিতে বাপ্পির অভিনয় দর্শকরাও গ্রহণ করছেন। এ ছবিটিই মূলত বাপ্পির ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টার্নিং পয়েন্ট বলে অনেকেই বলছেন। শাকিব খানের ঢাকাই ছবির ঢাকাই ছবির আরেক কান্ডারী হিসেবে বাপ্পির নামও উচ্চারণ করছেন কেউ কেউ। প্রায় প্রতি মাসেই তার অভিনীত ছবি মুক্তি পাচ্ছে।
হাতে ছবির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সম্প্রতি কমল সরকারের পরিচালনায় ‘পাগলামি’ নামে নতুন একটি ছবির শুটিং করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। এ ছবিতে বাপ্পীর বিপরীতে অভিনয় করছেন কলকাতার শ্রাবনী রায়। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় আছে আপন মানুষ, দাগ, আসমানি, রাজকুমার নামের ছবিগুলো। এছাড়াও বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে জুটি হয়ে ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ ছবির শুটিং করছেন বাপ্পী। ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি। অন্যদিকে ‘ডেঞ্জারজোন’ নামের নতুন একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এ নায়ক। এতে প্রথমারের মতো জাজের ঘরের আরেক নায়িকা জলির সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাকে। একসঙ্গে এত এত ছবির শুটিং করছেন, এতে কি ছবির মান ঠিক থাকে? এ প্রশ্নের উত্তরে বাপ্পীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘যারা অফিস করেন তারা তো প্রতিদিনই অফিসে যান। এ ক্ষেত্রে কি তাদের কাজের মান কমে যায়? আমি মনে করি বেশি কাজ করলেই কাজের মান কমে না। বরং আমাদের অভিনয়ের অনুশীলন আরও বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন ভালো গল্প উন্নত টেকনোলজি ও দক্ষ পরিচালক।’ ক্যারিয়ারে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাপ্পী। এ জন্য সমালোচিতও হয়েছেন। তবে সময় যত যাচ্ছে তার সঙ্গে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতাও বাড়ছে। এ অভিজ্ঞতার নৌকায় পা দিয়ে কঠিন পরিস্থিতিও মোকাবেলা করতে চান তিনি। আর অভিনয় দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসায় তাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চান যুগের পর যুগ।

No comments

Powered by Blogger.