সোনা-গহনা টাকা হারিয়ে দিশেহারা ভাড়াটিয়ারা

সিলেটের আতিয়া মহলের ধ্বংসস্তূপে অধিকাংশ ভাড়াটের সোনা-গহনা হারিয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তারা এখন সঞ্চিত টাকা ও সোনার গহনা খুঁজছেন। কিন্তু মিলছে না ওই টাকা ও সোনা। অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ হওয়ার পর ভবনটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে দিয়ে ফিরে যায় সেনাবাহিনী। এরপর বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার জন্য র‌্যাবের নেতৃত্বে চলে ‘অপারেশন ক্লিয়ার’। ইতিমধ্যে এই অপারেশনও শেষ হয়েছে। পাঁচ তলা ভবনের নিচতলার যে রুমে জঙ্গিরা বাস করত তার উল্টো দিকের তিন নম্বর ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন ভেটেরিনারি ফার্মাসিস্ট শ্যাম সুন্দর ঘোষ। তিনি জানান, স্ত্রী আশালতা ঘোষের সোয়া পাঁচ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ত্রিশ হাজার টাকাসহ সবকিছু খোয়া গেছে। ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় ভবনের মালিক উস্তার আলীর কাছে ইমিটেশনের একটি বাক্স হস্তান্তর করে। কিন্তু পাননি স্বর্ণ ও টাকা। তার পাশের রুমে পরিবার নিয়ে থাকতেন জকিগঞ্জের রাজমিস্ত্রি নিজাম উদ্দিন। তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, ‘কানের এক জোড়া দুল ও গলার চেইনসহ মূল্যবান জিনিসপত্রের কিছুই পাইনি।’ নিচতলার এক নম্বর রুমের অনিমেষ পাল নগদ টাকা-পয়সা, সোনা-গহনাসহ মূল্যবান সবকিছু হারিয়েছেন। চার তলায় স্বামী নিয়ে বসবাস করতেন কান্তা ভট্টাচার্য। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে। তিন তলার ১০নং ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাসকারী কৃষি অফিসের কর্মচারী শাহানা বেগমের বিয়ের সোনা-গহনা ও শাড়ি হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘শুধু বিয়ের জন্য আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছিল। আতিয়ার ধ্বংসস্তূপই আমার স্বপ্নের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। খালি স্বর্ণের কৌটা, খাট, ভাঙা ফ্রিজ ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’ তার প্রশ্ন- স্বর্ণের কৌটা পাওয়া গেল, স্বর্ণ গেল কোথায়?
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গোলাবারুদের আঘাতে সবকিছু যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে কৌটা অক্ষত থাকে কিভাবে? দোতলার ১০নং রুমের বাসিন্দা রাজনগর উপজেলার মুটুকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিমা রানী দে’র মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘জীবনের অর্জিত সম্পদ সোনা-গহনা টাকা-পয়সা সব চলে গেছে। তবে আফসোস নেই জীবন ফিরে পেয়েছি। এ জন্য সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ।’ ১৮ দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্ডন করে রাখা জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর মঙ্গলবার বাসায় গিয়ে বাসিন্দারা সোনা-গহনা, টাকা-পয়সা পাননি। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এত বড় একটা ঘটনা। সোনা কিংবা টাকা-পয়সার কথা মাথায় রেখে অপারেশন টোয়াইলাইট ও অপারেশন ক্লিয়ার পরিচালনা করা হয়নি। জীবন বাজি রেখে আতিয়া মহল বিস্ফোরকমুক্ত করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে র‌্যাবের মিডিয়া কর্মকর্তা জেএম ইমরান বলেন, যারা এসব অভিযোগ করেছেন এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। নিচতলার বাসিন্দা শ্যাম সুন্দরের কক্ষ পরিষ্কারের সময় চারটি আইইডি পাওয়া গেছে। দেয়াল ভেঙে গেছে। মেটাল ডিটেক্টরে কিছু বিস্ফোরকের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন আইইডির পাশে একটি কৌটা পাওয়া যায়। বিস্ফোরক সন্দেহে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে দেখা যায় অর্নামেন্ট। যেখানে জীবনটা নাও থাকতে পারত, পুরো সিঁড়িতে আইইডি লাগানো ছিল। এ পরিস্থিতিতে কিভাবে স্বর্ণের কথা মাথায় আসে! সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা কারও কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে স্থানীয় ওসির কাছে জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যেখানে শত শত গোলাবারুদ, রকেট লঞ্চার ব্যবহার হয়েছে, সেখানে স্বর্ণ কিংবা টাকা খুঁজে পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। নিচতলার সবকিছু ভস্মীভূত হয়ে গেছে।’ মোগলবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘এখানে আমি বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু আমার ক্ষতির কথা কেউ ভাবছে না। জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় আমি সহযোগিতা করেছি। ভবনটি হস্তান্তরের সময় র‌্যাবের কর্মকর্তারা বাসিন্দা শ্যাম সুন্দরের রুমে পাওয়া যে কৌটা দিয়েছেন সেটি ছিল অর্নামেন্টের। আর ওই কৌটাটি মালিকের কাছে সময়মতো পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.