ঢাবি’র হলে বহিরাগতদের দাপট by ফররুখ মাহমুদ

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উৎপল সাহার ছোট ভাই উদয় সাহা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও থাকতো জগন্নাথ হলে। গত ১৮ই নভেম্বর সুকুমার নামে এক গাড়িচালককে অপহরণ করে সে। নিয়ে আসে জগন্নাথ হলে। পরে প্রক্টর ও পুলিশ গিয়ে সুকুমারকে উদ্ধার করে। অপহরণের ঘটনায় সুকুমার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে। এ ঘটনায় জড়িত হলের কর্মচারী জনি পালকে বহিষ্কার করা হলেও উদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হওয়ায় কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা নিতে পারে নি। এমনি অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত বহিরাগতরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এখন চলছে বহিরাগতদের দাপট। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় এ বহিরাগতরা হলে অবস্থান করে। প্রশাসন অবগত থাকার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বৈধ শিক্ষার্থীদের টিভি রুম, গেমস রুম, মসজিদ, হলের বারান্দায় মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। বারান্দায়ও সিট পেতে দ্বারস্থ হতে হয় হলের নেতাদের। হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টন করলেও কোন শিক্ষার্থীই নেতাদের অনুমতি ছাড়া কক্ষে অবস্থান করতে পারে না। এদিকে বহিরাগতদের দাপটে কোণঠাসা হলের বৈধ শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, হলের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সবই করে এরা। তাদের শেল্টারে থাকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হল জগন্নাথ হল। এ হলেই সবচেয়ে বেশি বহিরাগতরা অবস্থান করে। এ সংখ্যা দুই শতাধিক। হলের কক্ষ বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেয় নেতারা। এমন অভিযোগ অসংখ্য। হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বহিরাগতদের সন্ধানে তিনবার তল্লাশি চালালেও কাউকেই আটক করতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তল্লাশি করার কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগেই কর্তৃপক্ষ তা নেতাদের জানিয়ে দেয়। ফলে বহিরাগতরা হল ত্যাগ করার সুযোগ পায়। অভিযোগ স্বীকার করেছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অসীম সরকার। তিনি বলেন, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযানের আগে আমরা নোটিশ টাঙিয়ে দিই। এ বিষয়ে জগন্নাথ হলের বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, নেতাদের ছত্রছায়ায় এ বহিরাগতরা হলে অবস্থান করে। তাদের কাছ থেকে রুম বরাদ্দ বাবদ ভাড়া নেয়া হয়। বহিরাগতরা যে সব রুমে থাকে সে সব রুমে তারা সিঙ্গেল বেডে থাকে। আবার আবাসিক শিক্ষার্থীরা ডাবল বেডে থাকেন। নেতাদের এসব কর্মকা- হল কর্তৃপক্ষ জানলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হলগুলোর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল একটি। এ হলে এক হাজার ছাত্রের ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে হলটিতে অবস্থান করছে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। রয়েছে অর্ধশত বহিরাগত। ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার আশ্রয়ে তারা হলে অবস্থান করে বলে জানা যায়। হলের ৮, ১৬, ২৬, ২৭, ২৮, ৪১, ৪৬, ৬৫, ১১৪, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪২, ১৫২, ১৭৭ নম্বর কক্ষসহ বেশ কয়েকটি কক্ষে বহিরাগতরা অবস্থান করে। এদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ, পুরান ঢাকা ও নেতাদের আঞ্চলিক বন্ধুরা রয়েছেন। কবি জসীমউদ্‌দীন হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকজন বহিরাগত হলে অবস্থান করছে। ২১৭ নম্বর কক্ষে আয়নাল, ৪০৯ নম্বর কক্ষে সুমন, ২২৭ নম্বর কক্ষে সবুজ ও দিদার। এরা সবাই এহতেশামের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বাসিন্দা। ২২০ নম্বর কক্ষে থাকে জুনায়েদ কাজী ও মিনারুল কাজী। সূত্র জানায়, জুনায়েদ কাজী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েতের ছোট ভাই। বঙ্গবন্ধু হলের ২০৫, ২১৩, ২২২, ২২৩, ৩১৯, ৩২০, ৫১৭ নম্বর কক্ষসহ কয়েকটি কক্ষে বহিরাগতরা অবস্থান করে। জিয়াউর রহমান হলে ২২৬, ৩১০, ৩১৯, ৩১৮ (খ), ৪০১সহ আরও কয়েকটি কক্ষে থাকে বহিরাগতরা। সম্প্রতি কবি সুফিয়া কামাল হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া আইডি কার্ডসহ ধরা হয়। পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। ছাত্রীদের হলে বহিরাগতদের সংখ্যা কম হলেও ছাত্রদের হলে এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৩টি ছাত্র হলে পাঁচ শতাধিক বহিরাগত অবস্থান করে। এ বহিরাগতরা অনেক ক্ষেত্রে নীলক্ষেত থেকে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, বহিরাগতরা আমাদের শিক্ষার্থী নয়, তাই তাদের হলে থাকার অধিকার নেই। হলে প্রভোস্ট রয়েছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রভোস্টরা বহিরাগত বিতাড়নে ছাত্রনেতাদের বাধার সম্মুখীন হন। এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, আমার মনে হয় না তারা বাধার মুখে পড়েন। নেতাদের এমন করার কথা না। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাই নি। হলে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে হল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.