বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে বিবাদ- কুমুদিনী কলেজ ও কাদের সিদ্দিকী মুখোমুখি

(টাঙ্গাইলে বিরোধপূর্ণ একটি জমির দখল ঠেকাতে গতকাল নোটিশ টাঙাতে যান প্রশাসনের লোকজন। একপর্যায়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী সেখানে গিয়ে নোটিশ না টাঙানোর অনুরোধ করেন। অনুরোধ উপেক্ষা করেই নোটিশটি টাঙিয়ে দেওয়া হয়, যদিও সেটি পরে খুলে নিয়ে গেছে কয়েকজন যুবক l ছবি: প্রথম আলো) টাঙ্গাইলে বিরোধপূর্ণ একটি জমির দখল নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে সরকারি কুমুদিনী কলেজ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। দখল ঠেকাতে জেলা প্রশাসন গতকাল শুক্রবার ব্যবস্থা নিতে গেলে তাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুমুদিনী কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, কলেজের সামনে মূল চত্বরের বাইরে ৩২ শতাংশ জায়গা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৫৪ সালের ১৬ জুলাই বেলা রানী সিংহের কাছ থেকে কলেজের জন্য কেনেন। ১৯৭৯ সালে কলেজটি সরকারীকরণ হওয়ার পর জমিটিও সরকারি সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জমিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে মালিকানা দাবি করে আসছেন কাদের সিদ্দিকীও। তাঁর দাবি, তিনি ১৯৭২ সালে মালিক কালিদাস রায়ের কাছ থেকে জমিটি কেনেন। ২০০৩ সালে পুকুরটির কিছু অংশ তিনি ভরাটও করেন। তখন এটি অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ শ্রেণির তালিকায় ছিল। পরে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে তিনি অবমুক্তির মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল গত বছর ৩০ জুন তাঁর পক্ষে রায় দেন। ২৯ জুলাই খাজনাও দিয়েছেন।
কলেজ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার কাদের সিদ্দিকী জমিটির চারপাশে সিমেন্টের খুঁটি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করান। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ শরিফা রাজিয়া টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী হাকিম ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসলাম মোল্লা পুলিশ নিয়ে গতকাল শুক্রবার ওই জমিতে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘মালিকানা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার স্থাপনা/নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা’ সম্বলিত নোটিশ টাঙিয়ে দিতে নির্বাহী হাকিম গতকাল বেলা ১১টার দিকে ওই জমিতে যান। একপর্যায়ে কাদের সিদ্দিকী তাঁর পক্ষে আদালতের দেওয়া রায়ের কপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেগুলো দেখিয়ে তিনি জমিতে ওই নোটিশ না টাঙানোর অনুরোধ করেন। তবে অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্বাহী হাকিম নোটিশ টাঙিয়ে দিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পরই কয়েকজন যুবক নোটিশটি খুলে নিয়ে যান। এ খবর জানার পর কলেজের শিক্ষকেরা কয়েক শ শিক্ষার্থীকে এনে বিরোধপূর্ণ জমিটির সামনে অবরোধ করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ শরিফা রাজিয়া বলেন, জমিটি কলেজের সম্পত্তি। অবৈধভাবে এটি দখলের চেষ্টা চলছে। তাই ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জমিটির মালিকানা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত দখলের চেষ্টা না করতে নোটিশ টাঙানো হয়েছিল। সেটি কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি না। তাই আমাকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। এ কারণেই নিজের জমিতে যাওয়ার পরও আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.