বাংলাদেশের নারীরা দ্বিগুণ গর্ভপাতের ঝুঁকিতে

ভিটামিন ই স্বল্পতায় ভোগা বাংলাদেশের নারীরা ভিটামিনপুষ্ট নারীদের তুলনায় গর্ভপাতের দ্বিগুণ ঝুঁকিতে রয়েছেন। জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় এমন বিষয় উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ খবর দিয়েছে ইউরেকা অ্যালার্ট। গবেষণায় বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশসমূহে নারীদের মাঝে খাদ্যমানে উন্নতি ঘটানো হলে ও গর্ভকালীন অবস্থায় মাকে ভিটামিন ই খাওয়ানো উৎসাহিত করা হলে, তা মায়ের উর্বরতায় সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এ গবেষণাকর্মের অন্যতম প্রধান ও জন হপকিন্স স্কুল অব পাবলিক হেলথের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী কেরি স্কুলৎস বলেন, প্রায় এক শতক ধরে আমরা ভিটামিন ই ও প্রাণীদের উর্বরতার ওপর এর ভূমিকা সমপর্কে জেনে আসছি। আমাদের জানা মতে, গর্ভপাত ও ভিটামিন ই-এর সমপর্ক নিয়ে মানুষের ওপর করা এটিই প্রথম গবেষণা। গবেষণার ফল বলছে, ভিটামিন ই ভ্রূণ রক্ষায় ভূমিকা রাখে। শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের সঠিক কর্মক্ষমতার জন্য ভিটামিন ই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কোষ ধ্বংস হওয়ার প্রক্রিয়া শ্লথ করে দেয় এটি। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যেই এটি পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের বেলায় ধারণা করা হয় রান্না করার সময় ব্যবহৃত ভেজিটেবল ওয়েলে এটি বেশি থাকে। বাংলাদেশের প্রায় ১৬০৫ জন দরিদ্র গর্ভবতী মায়ের শরীরের রক্তের নমুনা এই গবেষণার অধীনে বিশ্লেষণ করা হয়। এ গবেষণা ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে। এদের মধ্যে ১৪১ জন নারীর গর্ভপাত হয়েছিল। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ নারীর শরীরেই ভিটামিন ই স্বল্পতা পাওয়া গেছে। শরীরে দু’ধরনের ভিটামিন ই থাকে। এর মধ্যে আলফা উপাদানটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে, ভিটামিন ই পুষ্ট নারীদের মধ্যে ৫.২ শতাংশ নারী প্রথম কিংবা দ্বিতীয়বার গর্ভপাতের শিকার হয়েছে। অপরদিকে ভিটামিন ই স্বল্পতায় ভোগা নারীদের মধ্যে গর্ভপাতের শিকার হয়েছে ১০.২ শতাংশ নারী। গর্ভকালীন উন্নয়নশীল দেশসমূহের নারীদের মাল্টিভিটামিন খেতে দেয়া হয় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত দেশে গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থার আগে বা পরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন গ্রহণ করেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে নারীদের বরং আয়রন ও ফলিক এসিড খেতে দেয়া হয়। কেননা, গর্ভপাতের সঙ্গে শরীরে আয়রন ও ফলিক এসিড স্বল্পতার সমপর্কও রয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী বাংলাদেশী আবু আহমেদ শামিম বলেন, গর্ভধারণের আগেই গর্ভবতী মায়েদের শরীরে যথেষ্ট ভিটামিন ই থাকলে তা উপকারী হতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ভিটামিন ই স্বল্পতাকে ধরা হয় এক ধরনের সুপ্ত ক্ষুধা হিসেবে। কেননা, এর প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাওয়া না গেলেও, ভবিষ্যতে এর ব্যাপক নেতিবাচক স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়তে পারে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণায় সহায়তা ও সমর্থন করেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি), বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থা।

No comments

Powered by Blogger.