২৫ অবৈধ স্পটে থামে ট্রেন

টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২৫টি অবৈধ স্পটে ট্রেনের গতি কমানো, না হয় থামানো হচ্ছে। ঢাকাগামী প্রায় প্রতিটি ট্রেন এসব স্পটে থামছে বা গতি কমাচ্ছে। পয়েন্টগুলোতে আছে বস্তি না হয় লেভেল ক্রসিং। স্থানগুলোতে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরকসহ নানা ধরনের অবৈধ পণ্য নিয়ে চোরাকারবারী চক্রের সদস্যরা নামছে। না হয় ট্রেন থেকে পণ্য বোঝাই বস্তা বা ব্যাগ ফেলে দিচ্ছে। অনির্ধারিত স্থানে ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ যাত্রী নামতে থাকেন। সাধারণ যাত্রীবেশে এদের অধিকাংশই চোরাচালানি চক্রের সদস্য। এ ধরনের লোকজনের আড়ালেই নামানো হয় অবৈধ পণ্য। স্পট অনুযায়ী আগে থেকে লোকজন তৈরি থাকে। চোরাই পণ্য নামার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে নিরাপদে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। এই ২৫টি স্পটে গতি কমানো বা থামিয়ে দেয়া অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এভাবে ট্রেন থামানোর সঙ্গে রেলের ঊর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চালক, গার্ড, কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এছাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর অসাধু সদস্যদের যোগসাজশে চোরাই সিন্ডিকেট কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট প্রায় সবার সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কথা বলার সময় চোরাচালানিদের ভয়ে অধিকাংশই স্বনামে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, রেলওয়ের যাত্রীর তুলনায় নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা খুবই কম। ট্রেনে যাত্রীবেশে চোরাচালান হওয়ায় যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ যাত্রী সচেতন হলে রেলপথে চোরাচালান অনেকাংশ কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী বলেন, টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত অবৈধভাবে ট্রেন দাঁড় করানো কিংবা গতি কমানোর সঙ্গে জড়িতের চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রতিরোধকারী সংস্থা, রেলপথ কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন আউটার থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনের দু’পাশে কিছু স্থাপনাসহ অবৈধভাবে বস্তি, শত শত দোকানপাট, অস্থায়ী বাজার বসানো হয়েছে। টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন আউটার থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো এসব স্থানে ক্ষণে ক্ষণে গতি কমায়, আবার দাঁড় করায়। গতি কমানো, দাঁড় করানো কিংবা ভ্যাকুয়াম ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে সরাসরি ট্রেনের চালক, গার্ড ও যাত্রী নিরাপত্তায় নিয়োজিত রেলওয়ে জিআরপি ও নিরাপত্তা বাহিনীর অসাধু সদস্যরা জড়িত বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে ৩ দিনব্যাপী টঙ্গী ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে কমলাপুর পর্যন্ত ভ্রমণ করে দেখা গেছে, সাধারণ যাত্রীর আড়ালে চোরাচালানি চক্রের কর্ম কৌশল। বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো টঙ্গী কসাইবাড়ী রেল গেট, উত্তরা রেল গেট, টঙ্গীবাজার ও টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন গেট, আশকোনা, খিলখাঁও, কুড়িল বিশ্বরোড, শেওড়াপাড়া, স্টাফ রোড, মহাখালী, সৈনিক ক্লাব, বনানী, নাখালপাড়া, তেজগাঁও ট্রাক রোড, তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তি, কারওয়ানবাজার রেলওয়ে বস্তি, এফডিসিসংলগ্ন, মালিবাগসহ প্রায় ২৫টি স্থানে চোরাকারবারীরা কৌশলে যাত্রীবাহী ট্রেন দঁাঁড় করিয়ে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ নানা অবৈধ মালামাল নামায়। লাইন ঘেষেই রয়েছে অবৈধ মালামালা রাখার নির্দিষ্ট ঝুঁপড়ি ঘর। যেখান থেকে পুরো রাজধানীতে পাচার করা হয়।
সোমবার চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে টঙ্গী আউটারে এসে দাঁড়ায়। এখান থেকেই এ প্রতিবেদক এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে উঠে বসেন। কথা হয় ট্রেনের গার্ডের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গার্ড জানান, সারা দেশ থেকে আসা ট্রেনগুলো রাজধানীর প্রবেশমুখে এসে অটো প্রসেসে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে যায়। এতে তাদের কিছুই করার নেই। ইচ্ছে করলেই যে কোনো যাত্রী, এমনকি একজন শিশুও ট্রেনের ভ্যাকুয়াম ছেড়ে ট্রেন দাঁড় করাতে পারে। সব ক’টি বগিতেই ভ্যাকুয়াম ছাড়া ও শিকল টেনে ট্রেন দাঁড় করানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি শনিবার ভোর পৌনে ৬টায় বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে। টঙ্গী থেকেই এই ট্রেনে ওঠেন প্রতিবেদক। বিমানবন্দর প্রবেশের আগেই উত্তরা রেল গেটের আউটারে দু’দু’বার গতি কমানো হয় ট্রেনটির। ওই সময় মুহূর্তেই ট্রেনের ছাদ ও বগি থেকে যাত্রীবেশী লোকজন হুড়োহুড়ি করে নামতে থাকেন। কারও সঙ্গে ব্যাগ, বস্তা আবার কেউ খালি হাতে নামছেন। ট্রেনের নিচে অপেক্ষমাণ কয়েক যুবক ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে দ্রুত বস্তি ও স্থানীয় গলি দিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার পর তেজগাঁও ও কারওয়ানবাজার রেলওয়ে বস্তি বরাবর আবারও ট্রেন দাঁড় করানো হয়। তখন সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছিল। পাওয়ারকার ৭৩৫৪, চেয়ার কোচ ৭০৬১, ৭০৭০, শোভন ২১৬০, ৮০১৭ বগি থেকে পরপর নামাতে থাকে ছোট-বড় বস্তা, ব্যাগ ও ঝুড়ি। প্রায় ৫ মিনিট করে দাঁড়ানোর পর ট্রেনটি কমলাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তূর্ণা-নিশীথা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২-৩ জন পোশাক পরিহিত জিআরপি পুলিশ (পরিহিত পোশাকে নাম ছিল না) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রেনে যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন তাদের কাউকেই চোরাকারবারীরা পাত্তা দেয় না। কেন? চোরাকারবারীরাই টোকেন সিস্টেমে অবৈধ মালামাল নিয়ে রাজধানীতে আসছে। ধরছেন না কেন? কেউই ধরে না, রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসিরা লাইনম্যানের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা পাচ্ছে। ওসির নির্দেশ ছাড়া মালামাল ধরা যায় না। আপনাদের লাভ? তারাসহ ট্রেনে দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা চোরাকারবারীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকা পেয়ে থাকেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রত্যেকেই ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। বস্তা, ব্যাগ ও শরীরে আটকে যাত্রীবেশী চোরাকারবারীরা ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, নেশার বড়ি, নেশাজাতীয় ইনজেকশন, অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক দ্রব্য, মসলা সামগ্রী, কসমেটিক, বিদেশী মুদ্রা, সোনার বারসহ নানা অবৈধ পণ্য নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করছে।
টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২৩টি রেল ক্রসিং পয়েন্ট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রেল ক্রসিংগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরেকটি চোরাই সিন্ডিকেট। অধিকাংশ রেল ক্রসিং ঘিরেই রয়েছে লৌহার তৈরি সিগন্যাল পিলার। ট্রেন আসতেই প্রায়ই জ্বলে উঠে লালবাতি। লালবাতি জ্বললেই চালকরা ট্রেনগুলো দাঁড় করিয়ে দেয়। দ্রুত নেমে পড়ে যাত্রীবেশী চোরাকারবারীরা। সঙ্গে বিনা টিকিটের যাত্রীরাও। কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, টঙ্গী, খিলগাঁও, মালিবাগ রেলওয়ে বস্তিতে থাকা একাধিক বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ট্রেনই এসব বস্তি বরাবর গতি কমায়, কখনও দাঁড় করায়। নামানো হয় বস্তা বস্তা অবৈধ পণ্য।
রাতে চলাচলকারী ট্রেনগুলো এসব বস্তি বরাবর একেবারেই দাঁড়িয়ে পড়ে জানিয়ে বস্তির একাধিক বাসিন্দা জানান, ট্রেন থেকে নামানো অবৈধ মালামালের বস্তা তাদের ঝুপড়ি ঘরে রাখা হলে বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ পান। বস্তা বস্তা বিভিন্ন মাদক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য ট্রেনগুলো থেকে নামানো হয়। ভোরে আসা ট্রেনগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মালামাল নামানো হয়। ঝুপড়ি ঘরে মালামাল রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কৌশলে পাচার করা হয়। কখনও কখনও রেলওয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ট্রেন থেকে বস্তি বরাবর নেমে পড়েন। টাকার ভাগ নিয়ে চোরাকারবারীদের সঙ্গে প্রায় তর্কবিতর্ক করতে দেখা যায়।
রেলওয়ে মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বলেছেন, সারা দেশ থেকে আসা ট্রেনগুলো টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন আউটারে এসে জটলা বাঁধে, ফলে চালক বাধ্য হয়েই ট্রেন দাঁড় করায়। ট্রেনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় চোরাকারবারীরা ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে ভ্যাকুয়াম (হাওয়া) ছেড়ে ট্রেন দাঁড় করাতে পারছে। এ সুযোগটি কাছে লাগিয়ে রেলপথে চোরাচালান হচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে সাধারণ যাত্রীদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বয়েসী নারী-পুরুষ ও শিশুরা রেলপথে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রসহ গৃহবধূদের পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। চলতি বছরে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ইয়াবাসহ ১৩টি অধ্যাধুনিক অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আটক করা হয়েছে। স্টেশনবিহীন বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দাঁড়ানো ট্রেন থেকে যেসব অবৈথ মালামাল নামানো হয় তা আটক করা সম্ভব হচ্ছে না।
রেলওয়ে গার্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, কোনো অবস্থাতেই অনিয়ম করে ট্রেনের চালাক ও গার্ড ট্রেন দাঁড় করাতে পারে না। তবে সারা দেশেই চোরাকারবারীরা ইচ্ছেমতো ট্রেনের ভ্যাকুয়াম ছেড়ে নানা স্থানে ট্রেন দাঁড় করাতে পারে। ট্রেনের ছাদে, বগিতে চোরাকারবারী ছাড়াও তাদের প্রতিনিধি রয়েছে, তাদের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে ভ্যাকুয়াম ছেড়ে দেয়া হয়। তখন তাদের কিছুই করার থাকে না। জানালেন, অবৈধভাবে ট্রেন দাঁড় করানোর প্রতিবাদ কিংবা ট্রেনে চোরাকারবারীদের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় রেলওয়ে চালক, গার্ড, অ্যাটেন্টডেন্টসহ ৭ জন খুন হয়েছেন। কিছু খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বক্তব্যে বের হয়ে আসে রেলপথে চোরাচালানে বাধা দেয়ায় তাদের খুন করা হয়।
টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলওয়ে ক্রসিং গেটে দায়িত্বরত সুলতান আহম্মেদ, আবুল খায়ের, ইউসুফ, বরো মিয়া, মামুন, শাহজাহান, আয়নাল, আওয়ালসহ ১৫ জন গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধভাবে ট্রেন দাঁড় করানো সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বললেন, লালবাতি দেখলে তারা শুধু লাল নিশান উড়িয়ে ট্রেন দাঁড় করানোর অনুরোধ জানান। কেন লালবাতি জ্বালানো হয়? এটা সম্পূর্ণ কন্ট্রোল রুমের ব্যাপার। ট্রেন অবৈধভাবে দাঁড়ানো মানেই চোরাই পণ্য নামা এমনটা স্বীকার করে তারা বলেন, প্রতিরোধে তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, চোরাকারবারীদের সঙ্গে অনেক গেটম্যান সম্পৃক্ত রয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, লালবাতির জন্য ট্রেন দাঁড়ালেও, বিনিময়ে তাদের টাকা দিচ্ছে চোরাকারবারীরা।
এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) শাহ জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এলাকায় প্রায় সব যাত্রীবাহী ট্রেন কারণে-অকারণে দাঁড়ায় বা গতি কমায়। স্টেশন ছাড়া কিছু কিছু স্থানে ঢাকা রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে লাল সিগন্যালের মাধ্যমেও ট্রেন দাঁড় করানো হয়। তবে সেটা অন্য ট্রেনকে পাস দেয়ার জন্য। আর এ সুযোগটাই ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা।
অবৈধভাবে এ পথে ট্রেন থামানও বন্ধে তেমন সফলতা আসছে না জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ট্রেনে ৮ থেকে ১৬টি যাত্রীবাহী বগি থাকে। প্রত্যেক বগির ছাদের চার কোণে ভ্যাকুয়াম থাকে। ওই ভ্যাকুয়াম ঘুরিয়ে যে কেউ অনায়াসে ট্রেন থামিয়ে দিতে পারে। যা চোরাকারবারীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে। তবে এসব নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
টঙ্গী, বনানী, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কোনো নিরাপত্তা নেই। যে কোনো যাত্রী ইচ্ছে করলেই তল্লাশি ছাড়াই স্টেশন পার হতে পারে। চারদিকে খোলা থাকায় যাত্রীবেশী চোরাকারবারীরা স্টেশনগুলোয় নেমে অবৈধ মালামাল নিয়ে বিনা বাধায় বের হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের অসাধু পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এ ধরনের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা পাচ্ছেন। এ টাকার অংশ রেলপথ ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো হয় বলেও জানা গেছে। কখনও অবৈধ মালামালসহ আসামি আটক করলেও তা মোট চোরাচালানের মাত্র ৫ শতাংশ।
খোদ রেলওয়ে জিআরপি ও নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ৮ থেকে ১৬টি বগি থাকে, যাত্রী থাকে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার। সেই অনুযায়ী পুলিশ দেয়া হয় মাত্র ২ থেকে ৩ জন। এদের দিয়ে ট্রেনে চোরাচালান রোধ সম্ভব নয়। শুধু অসহায়ের মতো দেখতে হয় চোরাচালানের নানা কৌশল। ঢাকা রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি মো. আবদুুল মজিদ জানান, ট্রেনে যাত্রীবেশে চোরাকারবারীরা নানা কৌশলে মাদকদ্রব্যসহ অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক দ্রব্য রাজধানীতে পাচার করছে। গোপন সংবাদের ভিক্তিতে বিভিন্ন সময় অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক, মাদক দ্রব্যসহ আসামি গ্রেফতার করা হলেও ৯৫ শতাংশ যাত্রীদের তল্লাশি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন বিভিন্ন ট্রেন থেকে অবৈধ মালামাল আটক করা হলেও রেলপথে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা কামরুল আহসান যুগান্তরকে জানান, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৩য় ও ৪র্থ লেন না হওয়ায় ট্রেন পাসের জন্য প্রায় রেড সিগন্যাল দিতে হয়। যা কন্টোল রুম থেকে দেয়া হয়। কেন, কি কারণে রেড সিগন্যাল দেয়া হল তা লিপিবদ্ধ থাকে। সে সুযোগে হয়তো চোরাকারবারীরা নেমে পড়ে। ছাদ, ইঞ্জিন ও দুই বগির সংযোগস্থলে চড়া এবং বিনা টিকিটে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অবৈধভাবে ট্রেন দাঁড়ানোর ঘটনা কমে আসবে। ভ্যাকুয়াম ছেড়ে কিংবা শিকল টেনে যারা ট্রেন দাঁড় করাচ্ছে তাদের ধরতে জিআরপি ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মল্লিক ফখরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান রেলপথে যাত্রীবেশে চোরাচালানিরা তাদের পণ্য রাজধানীতে আনছে। ট্রেন দাঁড় করানো কিংবা ছাড়ার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নয় জানিয়ে তিনি বলেন, লোকবল স্বল্পতার বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা চোরাচালান রোধে কাজ করছেন ।

No comments

Powered by Blogger.