হাসিনা হ্যাটট্রিক করবেন: নাসিম

বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ২০১৯ সালের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ২০১৯–এর সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নাসিম এসব কথা বলেন। আজ শনিবার নগরের তেরখাদিয়া এলাকায় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই আপনারা টেলিভিশনে দেখছেন। প্রতিদিন নতুন কথা বলা যায় না।’ তিনি শুধু বলেছেন, ‘সম্মেলনগুলো সময়মতো হওয়া জরুরি। সময়মতো সম্মেলন হলে সংগঠনে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়।’
সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলার সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী সভাপতি ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ।
সর্বসম্মতিক্রমে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটাই আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র। এটাই জনগণের গণতন্ত্র। তিনি সবাইকে আগামী নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন।
সমঝোতার কমিটি, সরে দাঁড়ালেন ব্যবসায়ী সাংসদেরা
কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বানে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়ান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সাংসদ কাজী আব্দুল ওয়াদুদ। এই দুজনই পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলম সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কাউন্সিল অধিবেশনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম সভাপতি হিসাবে প্রস্তাব করেন। সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ কাজী আবদুল ওয়াদুদও একইভাবে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করেন। এরপর ওমর ফারুক ও আসাদুজ্জামান সর্বসম্মতিক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দুই ব্যবসায়ী সাংসদ এভাবেই সরে দাঁড়ানোয় অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লায়েব উদ্দিনও সরে দাঁড়ান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সভাপতি এবং কাজী আবদুল ওয়াদুদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করেন। এ অনুষ্ঠানে দুটি আসনের কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট বিনিময়ের চুক্তি হয়। অনুষ্ঠানে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার সকালে সম্মেলনস্থলে শাহরিয়ার আলমের ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরে তাঁর সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। কাজী আবদুল ওয়াদুদের লোকজনও তাঁর ছবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন। রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লায়েব উদ্দিন কোনো পোস্টার ব্যানার করেননি। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আসাদুজ্জামান অবশ্য নিজের ও নেত্রীর ছবি দিয়ে বড় ব্যানার করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে রাজশাহী সার্কিট হাউসে বসে সমঝোতা করতে সময় লেগে যায় বেশি। এ জন্য দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয় সম্মেলন।
নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, সকালে রাজশাহী সার্কিট হাউসে কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের নিয়ে বসেছিলেন। একটা সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি নিজে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এ অবস্থায় সভাপতি হিসেবে জেলার দায়িত্ব পালন করা তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হতে পারে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁকে বোঝান। পরে তিনি সেটা মেনে নিয়েছেন।
তবে কাজী আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি ফোন ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী লায়েব উদ্দিনের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আগের দিন রাতেই কেন্দ্রীয় নেতারা যখন রাজশাহীতে আসেন, তখন থেকেই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে সভাপতি হিসেবে ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আসাদুজ্জামানের নাম প্রস্তাব করলে সবাই মেনে নিয়েছেন।
সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তজার্তিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। এ ছাড়াও সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.