প্রতিদিনই ঢাকার রাস্তায় ঝরছে প্রাণ, এক বছরে নিহত ১৩৫

রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরছে তাজা প্রাণ। যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণেই ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালকের অদক্ষতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার ও মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের মতে, প্রায় ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বেপরোয়া গতি। ছুটির দিনে ও রাতে ঢাকার রাস্তাগুলো অনেকটা ফাঁকা থাকে। এ কারণে চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। তাই ছুটির দিনে ও রাতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক ক্ষেত্রেই চালকরা ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না। ডিএমপি’র (ট্রাফিক) উত্তরের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর রাজধানীতে গড়ে নিহত হন ১৩৫ জন।
গত আট দিনে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আট জন। গতকাল রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিন জন। বিকাল ৫টায় রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের চাপায় নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। রাজধানীর কদমতলি থানার শ্যামপুর ওয়াসা গেইট সংলগ্ন ঢাকা মেস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কালাম শ্যামপুরের সালাম স্টিল মিলসের নিরাপত্তাকর্মী। প্রায় একই সময়ে মতিঝিলের শাপলাচত্বরে বিআরটিসি’র যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নিহত হয়েছেন নুরেজা বেগম। তিনি শেরপুর সদরের পাকুরিয়া গ্রামের হামেদ আলীর স্ত্রী। এর আগে গভীর রাতে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে মালবাহী দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান,  দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন আহত হন। এদের তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আলমগীর হোসেন একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি এক সন্তানের জনক। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জে।
গত ২রা ডিসেম্বর বিকাল ৫টার দিকে মেরুল বাড্ডার এশিয়ান হাসপাতালের সামনে একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাদী মোর্শেদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আলমের পুত্র। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদরে।
গত শনিবার রাতে কাওরান বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাসসের সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক জগ্‌লুল আহমেদ চৌধূরী। ৩০শে নভেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরে বাসচাপায় এক যুবক নিহত হন। কল্যাণপুরে বিআরটিসি বাস ডিপো  গেইটের সামনে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় তার মৃত্যু ঘটে। ওই দিন সকালে রাস্তা পারাপারের সময় মালিবাগে দু’টি বাসের ফাঁকে আটকা পড়ে নিহত হন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল কাঞ্চন (২৩)। গত ২৫শে নভেম্বর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার কালশী এলাকায় ব্লু-মুন রেস্টুরেন্টের সামনে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নাজমুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য বলে জানা  গেছে।
এসব দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশিষ্ট সাংবাদিক জগ্‌লুল আহমেদ চৌধূরীর মৃত্যুর ঘটনায় কাঁঠালবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পুত্র নাবিদ আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু আজ পর্যন্ত ঘাতক চালক ও বাস শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন আড়াই হাজার মামলা হয়। কিন্তু বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হয় মাত্র ৩০০টি। এ বিষয়ে কঠোর ভাবে আইনপ্রয়োগের দাবি জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.