ফার্গুসনের পর এবার নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে বুধবার রাতে
বিক্ষোভকারীদের অনেকে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান।
মিজৌরির ফার্গুসনের পর এবার নিউইয়র্ক। শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। এবারও গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তে অব্যাহতি পেলেন পুলিশের সেই সদস্য। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নগরে। নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড বরোতে গত জুলাই মাসে অবৈধভাবে সিগারেট বিক্রির অভিযোগে কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গার্নারকে (৪৩) গ্রেপ্তার করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যানিয়েল প্যান্টালিও (২৯)।
গার্নার তখন নিরস্ত্র ছিলেন। আটক-প্রক্রিয়ার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত গ্র্যান্ড জুরি গত বুধবার সিদ্ধান্ত দেয়, গার্নারকে হত্যার ইচ্ছা ড্যানিয়েল প্যান্টালিওর ছিল না। তাই তাঁকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা যাবে না। এই সিদ্ধান্তের পরপর বিক্ষোভ শুরু হয় স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে নিউইয়র্ক নগরের অন্য এলাকায়। বুধবার রাতে নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ার, টাইমস স্কয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। তাঁরা গার্নারের শেষ উক্তি ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’ বলে স্লোগান দেন। মধ্যরাত পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিউইয়র্ক ছাড়াও অন্তত ৭০টি নগরে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিউইয়র্ক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে বলেন, ‘যখন দেশের কোনো নাগরিক মনে করেন তাঁকে আইনের দৃষ্টিতে সমানভাবে দেখা হচ্ছে না, তখন এ সমস্যা সমাধানের জন্য সহযোগিতা করা আমার কাজ।’ অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার জানিয়েছেন, এই মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত করা হবে। ড্যানিয়েল প্যান্টালিও এক বিবৃতিতে নিহত গার্নারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। গার্নারের স্ত্রী ইসা গার্নার বুধবার রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কোনো সমবেদনা প্রকাশই আমার জন্য যথেষ্ট নয়। আমার বাচ্চাদের জন্য এবার বড়দিনে কে সান্তা ক্লজ সাজবে?’
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা আল শার্পটন ১৩ ডিসেম্বর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছেন। বলা হচ্ছে, গার্নারকে ধাওয়া করে ধরে ড্যানিয়েল তাঁর গলা চেপে ধরলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর গার্নারের মৃত্যু হয়। তখন পুলিশ বলছিল, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে গার্নার বলছিলেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ গার্নারের মৃত্যুর পরই বিক্ষোভ শুরু হলে ড্যানিয়েলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে কি না, তা বিবেচনার জন্য গ্র্যান্ড জুরি গঠন করা হয়। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসনে গত সপ্তাহেই গ্র্যান্ড জুরির রায়ে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পান শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় সারা দেশে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার অভিযোগ থেকে গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তে অব্যাহতি পেলেন আরেক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.