সুন্দরী তৈদুছড়া ঝরনা by আজহার হীরা

এডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে ঝরনা তৈদুছড়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এ ঝরনাটি রাঙ্গামাটির সুভলং ঝরনা এবং খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পট আলুটিলার রিছাং ঝরনার চেয়েও বড়। এ ঝরনাকে ঘিরে রয়েছে আরও ৩টি ছোট ঝরনা এবং ২টি মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। আরও রয়েছে ছোট বড় শিলা আকৃতির পাথর। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আকর্ষণীয় এক পর্যটন স্পট। বর্তমানে তৈদু ঝরনা দেখতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। দুর্গম এলাকা এবং যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় ভোগান্তিও পেতে হয় পর্যটকদের। সরু পাহাড়ি রাস্তা, ছড়া আর কাদাযুক্ত পথ অতিক্রম করে পৌঁছতে হয় ঝরনায়। ইতিমধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা সহ ঝরনা এলাকাটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কি. মি. দূরে এই  ঝরনার অবস্থান। স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী এ ঝরনাটির নাম দিয়েছে ‘তৈদুছড়া  ঝরনা’। ত্রিপুরা ভাষায় তৈ অর্থ পানি আর দু অর্থ ধারা। তৈদু মানে ঝরনা ধারা। উপজেলা সদর সংলগ্ন থানা বাজারের পাশ দিয়ে পোমাংপাড়া হয়ে যেতে হবে তৈদুপাড়া। তৈদুপাড়ায় পৌঁছার ১ কি:মি: আগেই শেষ হবে গাড়িপথ। এরপর থেকেই শুরু হবে পায়ে হাঁটা। প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর পৌঁছতে হবে ঝরনাতে। অথবা খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের নয় মাইল দিয়ে সীমানাপাড়া হয়েও যাওয়া যায় ঝরনাটিতে। সেক্ষেত্রে সীমানা পাড়া পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথটুকু যেতে হবে হেঁটে। প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পর দেখা মিলবে একটি ঝরনার। এরপর ডিম্বাকৃতির পাথরের পথ বেয়ে আরও কিছু দূর এগোলেই চোখে পড়বে মূল ঝরনাধারা। পর্যটকদের ঝরনা পর্যন্ত নিয়ে যেতে রয়েছে স্থানীয় গাইড। তৈদুপাড়ার অজিত ত্রিপুরা (৩৮) জানান, গ্রামের লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ করতে গিয়ে এ ঝরনা আবিষ্কার করেন। তারা  ঝরনার নাম দেয় তৈদুছড়া ঝরনা। কিন্তু এ ঝরনার কথা মানুষকে বললে প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। খবর পেয়ে দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিব ত্রিপুরা দুই বন্ধুসহ ঝরনা এলাকা ঘুরে আসেন। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঝরনাটির কথা জানান। এরপর রাজিব ত্রিপুরা, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান মিঞা, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর, জাকির ও পলাশ ঘুরে আসেন ঝরনা এলাকা। এরপরই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তৈদুছড়া ঝরনার খবর। সরজমিন ঝরনা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তৈদু ঝরনায় পৌঁছার পূর্বে তৈদুছড়াতে প্রায় ১ কি.মি. পর্যন্ত পড়ে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির বড় বড় পাথর। এসব পাথর দেখলে মনে হয় একপাল হাতি বাচ্চা নিয়ে ছড়ার পানিতে শুয়ে রয়েছে। পাশেই মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। পানির নিচে প্রাকৃতিকভাবে পাথর দিয়ে ঢালাই করা। প্রবল স্রোতের পরিষ্কার পানির ফোয়ারা দেখলে সেখানে ভিজে গোসল করার লোভ সামলানো কোন পর্যটকের পক্ষেই সম্ভব নয়। খাগড়াছড়ির তপন ত্রিপুরা জানান, রাঙ্গামাটির সুভলং ঝরনা এবং খাগড়াছড়ির আলুটিলার রিছাং ঝরনার চেয়েও  ভাল লেগেছে তৈদুছড়া  ঝরনা। কারণ, তৈদুছড়া ঝরনাতে পড়ন্ত পানির মাঝখানে বসার জন্য তিন স্তরে তিনটি জায়গা রয়েছে। যে সুবিধা অন্য  ঝরনাগুলোতে নেই। তৈদু  ঝরনার পাশের জলপ্রপাতগুলো আরও বেশি আকর্ষণ করে। তাই দুর্গম এলাকায় হলেও কয়েকবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে তৈদু ঝরনাতে গিয়েছেন তিনি। ঢাকা থেকে  ঝরনা দেখতে আসা ভিকারুননিসা নূন  স্কুল এন্ড কলেজের গণিতের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি আরও ঝরনা দেখেছেন। তবে তৈদু ঝরনা সবচেয়ে সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে কষ্ট পেতে হয়। কিন্তু ঝরনার কাছে যাওয়ার পর সেই কষ্ট দূর হয়ে যায়। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.