যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে

ইন্দোনেশিয়ার জাভা সাগরে এয়ারএশিয়ার নিখোঁজ উড়োজাহাজটির
তল্লাশিতে ব্যস্ত দেশটির সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য।
প্রশ্ন: খারাপ আবহাওয়ার জন্য উড়োজাহাজটির কী পরিণতি হতে পারে?
বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কমবেশি এক ঘণ্টার মাথায় দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উধাও হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে উড়োজাহাজটি খারাপ আবহাওয়া এড়াতে জাকার্তার এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কাছে আরও বেশি উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি চেয়েছিল। ঘটনার সময় উড়োজাহাজটি যে এলাকায় ছিল, সেটি প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়ার এলাকা হিসেবে পরিচিত। জাকার্তাভিত্তিক বিমান চলাচলবিষয়ক পরামর্শক গ্যারি সোয়েজাটমানের মতে, খারাপ আবহাওয়াই উড়োজাহাজটি উধাও হওয়ার মূল কারণ কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, তার ভিত্তিতে বলা যায়, পাইলটরা আগের নির্ধারিত গন্তব্যপথ থেকে সরে বাঁয়ে মোড় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ঘন মেঘ এড়াতে আরও বেশি উচ্চতায় ওড়ার অনুমতিও চেয়েছিলেন। বাঁয়ে মোড় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে অনুমতি ছাড়াই উড়োজাহাজটি বেশি উচ্চতায় ওড়া শুরু করেছিল, এখন এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সেটা সত্য হলে সমস্যাটা ধারণার চেয়েও বেশি গুরুতর ছিল। তাই উড়োজাহাজটি রক্ষার জন্য পাইলটরা অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’
প্রশ্ন: এভাবে উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার নজির আরও কি আছে?
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৩৭০ কুয়ালালামপুর থেকে ২৩৯ আরোহী নিয়ে চীনের বেইজিংয়ে যাওয়ার পথে গত ৮ মার্চ নিখোঁজ হয়। এখন পর্যন্ত নিবিড় তল্লাশি চালিয়ে উড়োজাহাজটির সন্ধান মেলেনি। ২০০৯ সালের জুন মাসে ২২৮ আরোহী নিয়ে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৪৭ আটলান্টিক মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়। দিনের পর দিন তল্লাশি চালিয়েও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে কয়েক বছর পর ধ্বংসাবশেষের অবস্থান শনাক্ত করা গিয়েছিল। তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, কারিগরি এবং মানবসৃষ্ট—উভয় সমস্যার কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডাম এয়ারের ফ্লাইট ৫৭৪ ইন্দোনেশিয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে ১০২ আরোহী নিয়ে চলার সময় রাডারের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কয়েক দিন তল্লাশি চালানোর পর ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিলেছিল। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল।
প্রশ্ন: নিখোঁজ হওয়ার আগে ফ্লাইট কিউজেড-৮৫০১ কি ধীরে উড়ছিল?
প্রাথমিক তথ্যে ইঙ্গিত মিলেছে, উড়োজাহাজটি ঘটনার সময় যে গতিতে ওড়ার কথা ছিল, উড়ছিল তার চেয়ে অনেক ধীরে। উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ে লেখালেখি করা ব্লগার ডেভিড সেনসিওত্তি দিএভিয়েশনডটকম-এ লিখেছেন, প্রচণ্ড বাতাসের কারণে পাইলট গতি কমিয়ে থাকতে পারেন। আর বিশ্লেষক সোয়েজাটমান জানিয়েছেন, এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ফাঁস হওয়া যে ছবিটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিতে দেখা যাচ্ছে, উড়োজাহাজটি ‘অত্যন্ত কম’ গতিতে উড়ছিল। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেলে উড়োজাহাজটি আকাশ থেকে পড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
প্রশ্ন: আমরা কি সন্ত্রাসবাদ বা ছিনতাইয়ের প্রচেষ্টার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেকোনো কিছুই ঘটে থাকতে পারে। কোনো আশঙ্কাকেই এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব এয়ার সেফটি ইনভেস্টিগেটরসের সদস্য অ্যান্টনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘একজন তদন্তকারী হিসেবে আমি সব সম্ভাব্যতাকেই বিবেচনায় রাখার প্রশিক্ষণ পেয়েছি। তবে এই মুহূর্তে আমি অপরাধমূলক কিছুর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।’
প্রশ্ন: উদ্ধারকারীদের কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে?
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় তল্লাশি ও উদ্ধার সংস্থার (এনএসআরএ) প্রধান বামবাং সোয়েলিসটোয়ো গতকাল সোমবার বলেছেন, অনুসন্ধানের স্থানে সাগরের গভীরতা ১৩০ থেকে ১৬০ ফুট। বিশ্লেষক সোয়েজাটমান বলেন, তল্লাশি এলাকায় সাগরের গভীরতা কম হলেও সেখানে কাদা ও কঠিন শিলা থাকাটা স্বাভাবিক। এ ধরনের উপাদান উড়োজাহাজটির ইএলটি থেকে ছাড়া সংকেত পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.