মেয়ের জিপিএ-৫ ক্ষুব্ধ শিক্ষক পিতা

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মেয়ের ভাল ফলে বিস্মিত এক শিক্ষক পিতা পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক গতকাল তার ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে ‘শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ করার কথাও জানিয়েছেন। যাতে অন্যদের শরিক হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শিক্ষানীতিবহির্ভূত পিএসসি পরীক্ষা চালু করেছে যারা, তারা ‘সিরিয়াল চাইল্ড কিলার’। আমরা গঠন করেছি ‘শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন’। আমরা বই উৎসবের দিনে, পহেলা জানুয়ারি দাঁড়াবো উদয়ন/বুয়েট/অগ্রণী/ভিকারুন্নেসা বা এরকম কোন বিদ্যালয়ের সামনে। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আমার আর রিপার মেয়ে তাহিয়া জিপিএ-৫ পেয়েছে। সব সাবজেক্টে এ প্লাস। কিন্তু আমি খুশিতে আত্মহারা নই। ও ওয়ান থেকেই মোটামুটি ‘সি’ পেয়ে পাস করে আসছে। আমি জানি ওর জিপিএ ফাইভ পাবার যোগ্যতা আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তা নেই। মেয়ের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে মর্মে  ‘শতভাগ নিশ্চিত’ এই অভিভাবক বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত এ-প্লাস বিস্ফোরণ বন্ধ হওয়া দরকার। এটা শিশুদের রেজাল্ট সম্পর্কে ভুল ধারণা দিচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের কথা আলাদা করে বলার প্রশ্নই আসে না। আর পিএসসির মতো শিশুহত্যাকারী পাবলিক পরীক্ষা আজকেই উঠিয়ে দেয়া দরকার। তিনি বলেন, পিতা-মাতা হিসেবে আমরা ওকে ‘সি’  পেয়ে বড় হয়ে ওঠার পরিবেশই দিয়েছি। ও স্কুলে যাবে, ক্লাস করবে, সবার সঙ্গে মিশবে, সামাজিক হবে, হাসবে খেলবে, বাইরের বইপত্র পড়বে, প্রচুর দুষ্টুমি করবে, নিজেই ফেইরি হয়ে স্বপ্নরাজ্যে ঘুরবে...। কিন্তু হাসতে খেলতে কয়েক বছর পেরিয়ে গেল, পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা চলে এলো। আমরা ওকে চাপাচাপি শুরু করলাম। খেয়াল করা গেল ও অংকে বেশ দুর্বল। হাফ ইয়ারলিতে পঞ্চাশের কম নম্বর পেয়েছে। টিউটর বিদায় করে নিজেই অংক-বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করলাম। নির্বাচনী পরীক্ষায় অংকে সে ৭৩ পেল। এরপর প্রায় এক দেড়-মাস ঘরে বসে প্রচুর পড়লো সে। ও খেটেছে অনেক। তাতে সি থেকে বি হবার কথা। কিন্তু সবগুলোতে এ-প্লাস পাওয়া অ্যাবসার্ড ব্যাপার। আমি ওকে শেষ দুই মাস পড়িয়েছি। আমি জানি। ওর পরীক্ষাও ভাল হয়েছে কিন্তু, দুই-তিন মাসে এমন কোন ম্যাজিক কেউ দেখায় নি যে, বা জিনি এসে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যায় নি যে, ও গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। বলাবাহুল্য, সে ফাঁস হয়ে যাওয়া কোন প্রশ্নও হাতে পায় নি। আমরা সেসব খুঁজিও নি। মেয়ের নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে কিভাবে শতভাগ নিশ্চিত হলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদুল হক বলেন, আমি ওকে চিনি। ওর প্রস্তুতি নিয়ে জানি। ওর মেধা সম্পর্কে আমার জানা আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেছি। জিপিএ ফাইভ পাওয়ার মতো করে তাকে পড়ানো হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.