জাভা সাগরের নীল পানিতে লাশ আর লাশ

জাভা সাগরের নীল পানিতে লাশ আর লাশ। এখানে-ওখানে ভেসে আছে রোববার নিখোঁজ হওয়া এয়ার এশিয়ার ধ্বংসস্তূপ। রোববার ও সোমবার প্রিয়জন হারানো স্বজনরা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন- হয়তো অলৌকিকভাবে হাসিমুখে তাদের মাঝে ফিরে আসবেন তারা। কিন্তু গতকাল যখন সাগরে একে একে কমপক্ষে ৪০টি লাশ শনাক্ত করা হয়, দেখা মেলে এয়ার এশিয়ার এয়ারবাস এ-৩২০-এর ধ্বংসাবশেষ তখন চারদিকে শুধু কান্না আর কান্না। এ সময় শোকাহত হয়ে অনেকে বেহুঁশ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ইন্দোনেশিয়ার এ ফ্লাইটে ছিলেন ১৬২ আরোহী। এর বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। এত মানুষ হারিয়ে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে শোকবিধুর এক পরিবেশ। দু’দিন পরে গতকাল দেশটির নৌবাহিনী ওইসব মৃতদেহ ও ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করে সমুদ্রে। এয়ার এশিয়া নিশ্চিত করেছে যে, লাশগুলো ওই নিখোঁজ বিমানের আরোহীদের। ধ্বংসাবশেষ ওই বিমানের। এর ফলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে এর স্বপক্ষে প্রমাণ মিললো। অনুসন্ধান চালিয়ে গতকাল কমপক্ষে ৪০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট কিইজেড ৮৫০১ রোববার ১৬২ আরোহী নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জুয়ান্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। এ খবর আসার পরপরই শুরু হয় ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা। উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিনে উদ্ধারকর্মীরা কমপক্ষে ৪০টি মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হলেন। উদ্ধার অভিযান প্রধানের এক সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ইন্দোনেশিয়ার টিভি চ্যানেলে ভাসমান ধ্বংসাবশেষের দৃশ্য সরাসরি দেখানো হয়। পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ ৪০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নৌবাহিনীর মুখমাত্র আরও জানিয়েছেন, মৃতদেহ উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধার অভিযানের প্রধান ব্যামব্যাং সোয়েলিসতিও বলেন, তিনি ৯৫ ভাগ নিশ্চিত ধ্বংসাবশেষগুলো ওই বিমানের। সমুদ্র এবং স্থলের ১৩টি ভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছিল। যে এলাকায় ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে ও মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে সেখানে সকল উদ্ধারকর্মীকে পাঠানো হচ্ছিল। আর উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলোকে নিয়ে যাওয়া হবে নিকটবর্তী শহর পাঙ্কালান বুনে। এছাড়াও সেখানে পানির নিচে বিমানের কোন অংশ ডুবে আছে কিনা তা নির্ধারণ করতে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন জাহাজ পাঠানো হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার সিভিল এভিয়েশন প্রধান ডিজোকো মুরজাতমোদজোকে উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিমানটির যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত দরজা এবং কার্গো দরজা খুঁজে পাওয়া গেছে। গতকাল স্থানীয় সময় ভোর ছয়টায় দিনের অভিযান শুরু হওয়ার পর কমপক্ষে ৩০টি জাহাজ, ১৫টি বিমান এবং ৭টি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে এ অভিযানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্ধারকারী দল। এছাড়াও সহায়তার প্রস্তাব দেয় দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারত ও ফ্রান্স। আর উদ্ধার এলাকার পথে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন জাহাজ ইউএসএস স্যাম্পসন। এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটটিতে ছিলেন ১৬২ জন আরোহী। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী ছিলেন ১৩৭ জন। ১৭ জন শিশু এবং একজন নবজাতক। এছাড়া দুই পাইলটের পাশাপাশি ছিলেন ৫ জন ক্রু। আরোহীদের বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। অন্য দেশের নাগরিকদের মধ্যে ছিলেন তিন দক্ষিণ কোরিয়ান আর একজন করে বৃটিশ, মালয়েশিয়ান এবং সিঙ্গাপুরিয়ান। রোববার ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল ৫:৩৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা করে ফ্লাইট ইকিউজেড-৮৫০১। উড্ডয়নের ৪২ মিনিট পর বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এর চার মিনিট আগে বিমানের পাইলট  খারাপ আবহাওয়ার কারণে ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ৩৮ হাজার ফুটে উড্ডয়নের অনুমোদন চান। ছাড়পত্র পাবার আগেই রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বিমানটি। এয়ার এশিয়ার ইতিহাসে এতো বড় দুর্ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।

No comments

Powered by Blogger.