বাইরের চাপ ও দক্ষতার অভাবে দুদক কাজ করতে পারে না’ -টিআইবি

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন,  দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকারসহ সকলকে তারা জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসবে। এটাই তাদের কাজ। যদি ভবিষ্যতে  সরকারের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করে তাহলে তারা কাজ করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটি যেভাবেই স্বাধীন হোক স্বাধীন নতুন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠতে পারেনি। বিলুপ্ত ব্যুরোর বেশকিছু লোক এখনও সেখানে কাজ করছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপ থেকে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। অভ্যন্তরীণভাবে দুদকের বেশকিছু দুর্বলতাও রয়ে গেছে। পদ্মা সেতু মামলার এফআইআর ও পরে আবুল হোসেন ও আবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক প্রত্যাশা জাগিয়েছিল। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন দুর্নীতিতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এই  সিগন্যাল পেয়ে তারা প্রথমবারের মতো কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে সরকার, নিজেদের ও জনগণের মধ্যে অনেক প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। পরে দেখা যায় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা কাজ দেখাতে পারেনি- বাইরের চাপ, নেতৃত্ব, সৎ সাহস ও পেশাগত দক্ষতার অভাবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর ফলে রাজনৈতিক মহল থেকে দায়মুক্ত কমিশন হিসাবে একটি কথা আসছে। কথাটি রাজনৈতিক মহল থেকে এলেও অযৌক্তিক নয়। কারণ, দুদকের যে সুযোগটি এসেছিল তা তারা কাজে লাগাতে পারেনি। তবে আইনগত দিক থেকে দুদকের অনেক শক্তি আছে। শক্তি-সামর্থ্য যা আছে তা দিয়ে কাজ করতে পারলে তারা অনেকটা সফল হতে পারতো। তবে দুদককে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বলতে যা বুঝায় এখনও তা কিন্তু নয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমি বলবো তাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ফান্ড, নিয়োগ ও অর্গানোগ্রামের জন্য সরকারের মুখোমুখি হতে হয়। এ জন্য তারা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে থাকে। আর যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তারা টাকা পয়সাওয়ালা রাঘববোয়াল নানাভাবে ক্ষমতাবান হওয়ায় অনেক সময় বাইরে থেকে আইনজীবীও আনতে পারেন। আর ফান্ডের কারণে অনেক সময় দুদক তা পারে না। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি আইনি  প্যানেল ছিল। এখন আর তা সেভাবে নেই। এই যে  দুর্বলতা-প্রতিবন্ধকতাকে মানতে হবে। তবে আমাদের অনেক ভাল কর্মকর্তা আছেন। তিনি বলেন ইতিমধ্যে দুদক ১০ বছর পার করেছে। এখন তাদের পেছনে ফিরে তাকানোর সময় হয়েছে। তারা কি করেছে, আগামীতে কি করবে- এসব দীর্ঘ মেয়াদি কৌশল নিয়ে তাদের এগোতে হবে। তবে আশার কথা হলো, তারা কিছু জনসচেতনতামূলক কাজ শুরু করেছে যেমন গণশুনানি। দুদক ও আমরা ভিন্ন  ধারার হলেও একই পথের পথিক। আমাদের লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটিকে শক্তিশালী করা। দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন  আপনারা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। টিআইবিকে ঘরের শত্রু বিভীষণ উল্লেখ  করে তিনি এ ধরনের শত্রুর কাছ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন একটি অনুষ্ঠানে । এ প্রশ্নে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মাঝে মধ্যে তারা আমাদের নিয়ে দুদকের ভাষায় নয়, রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলে। সমালোচনা সইবার ক্ষমতা তারা অর্জন করতে পারেনি বলে তাদের এই অবস্থা। এতে আমরা অবাক হইনি। বিব্রত হয়েছি। তবে  দুদকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ‘লাভ এন্ড হেট’।

No comments

Powered by Blogger.