পরীক্ষা না দিয়েও জিপিএ–৫, দিয়েও অনুপস্থিতিজনিত ফেল! by আবদুর রব সুজন

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এক নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সাজ্জাদ ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষাÿনা দিয়েও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর একই বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী মিম মানতাসা পরীক্ষা দিয়েও অনুপস্থিতিজনিত ফেল করেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, হাতীবান্ধা এক নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার ৯৯ জন শিক্ষার্থীর পিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। এলাকার বাইরে অবস্থান করাসহ বিভিন্ন কারণে নয়জন পরীক্ষা দেয়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলে দেখা যায় এই নয়জনের মধ্যে হাতীবান্ধার পূর্ব সিন্দুরনা গ্রামের হাচেন আলীর ছেলে সাজ্জাদ ইসলাম (রোল নং- ২৪৩৫) জিপিএ-৫ পায়। আর পরীক্ষা দেওয়ার পরও একটি পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানোর কারণে ফেল করেছে একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিম মানতাসা (রোল নং- ২৪৯৫)।
এলাকার কয়েকজেনর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাজ্জাদ ইসলাম পিএসসির মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেয়নি। চূড়ান্ত পরীক্ষার ৩-৪ মাস আগে ঢাকায় কাজ করতে চলে যায় সে।
এ ব্যাপারে সাজ্জাদের বাবা হাচেন আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বিপরীত দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা দিয়েও ফেল করা মানতাসার বাবা মাহাবুবর রহমান এবং মা মাহাবুবা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ‘একবুক আশা নিয়ে মানতাসাকে প্রতিটি পরীক্ষার দিন স্থানীয় লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১ নম্বর কক্ষেÿরেখে এসেছি। অথচ বাংলা পরীক্ষায় তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল করিয়ে দেওয়া হলো। মেয়েকে কী সান্ত্বনা দেব, ভেবে পাচ্ছি না। আমরা এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
হাতীবান্ধা এক নম্বর সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবী, সহকারী শিক্ষক শাহআলম ও শাপলা খাতুন জানান, সাজ্জাদ পরীক্ষা না দিয়েও জিপিএ-৫ পেল আর মানতাসা পরীক্ষা দিয়েও ফেল করল। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর ও দুঃখজনক। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করবে।’
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্বাস আলী ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ঘটনাটি জানতে পারামাত্রই গতকাল বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, কেন তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না, তিন দিনের মধ্যে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফলাফল তৈরিতে যাচাইবাছাই না করে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল প্রণয়ন করে সরকারি কাজে জটিলতা তথা জনমনে বিভ্রা‌ন্তি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১১ সালে একই উপজেলার ভেলাগুড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পাস করেছিল সুবর্ণা রানী শীল। এ ব্যাপারে প্রথম আলোয় ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি ‘পরীক্ষা না দিয়েও জেএসসি পাস!’
শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের হস্তক্ষেপের কারণে তৎকালীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

No comments

Powered by Blogger.