উত্তর ভারতে হাড় হিম ঠান্ডা

মাঝ-পৌষেই মাঘের শীত বাঘের গায়। গোটা উত্তর ভারত ঠান্ডায় জবুথবু। হাড় হিম ঠান্ডায় হিহি কাঁপুনি এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে প্রাণহানির খবর এই মুহূর্তে উত্তর ভারতের দিবা-রাত্রির কাব্য। গতকাল রোববার দিল্লির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই শীতে সর্বনিম্ন। দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানার গুরগাঁওয়ের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির প্রায় কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রিতে গুরগাঁওয়ের মানুষ হতবাক। পাঞ্জাবের অমৃতসর, রাজস্থানের বিস্তীর্ণ মরু অঞ্চল, হরিয়ানার হিসার অথবা লক্ষ্ণৌসহ উত্তর প্রদেশের সমগ্র পশ্চিম প্রান্ত গুরগাঁওয়ের সঙ্গে যেন পাল্লা দিচ্ছে। তবে শীত যাঁদের তেমন কাবু করে না, তাঁরা ভিড় বাড়াচ্ছেন সিমলা-মুসৌরিতে। পাহাড়ে তুষারপাতের সাক্ষী হওয়া কিংবা কাশ্মীরের উপত্যকায় ডাল লেকের জমে বরফ হয়ে যাওয়া দেখতে পাওয়া সমতলের মানুষদের কাছে অভিনব অভিজ্ঞতা।
এই শৈত্যপ্রবাহের মূল্যও দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই গোটা উত্তর ভারতের চরাচর ঢেকে যাচ্ছে ঘন কুয়াশার চাদরে।
সেই কুয়াশা ভেদ করে যান চলাচল প্রাণ বাজি রেখে চলার মতোই। দিল্লি-আগ্রা এক্সপ্রেসওয়েতে দুই দিন আগে এই কুয়াশার বলি হয়েছে একসঙ্গে ৪৮টি যাত্রীবাহী গাড়ি। একের পর এক গাড়ির সংঘর্ষে মৃত্যু হয় একাধিক মানুষের। ঠান্ডা ও কুয়াশার বলি উত্তর ভারতে এই মুহূর্তের নৈমিত্তিক ঘটনা। কুয়াশার জন্য প্রতিদিন শতাধিক বিমান বিলম্বে ওঠা-নামা করছে। ফুটপাতবাসীদের ছাদের তলায় নিয়ে আসার যে উদ্যোগ ফি বছর রাজধানীতে দেখা যায়, এবারেও তা নিয়ে তোড়জোড় রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম নৈশ আবাসে ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ রব। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মধ্যে কম্বল বিলির প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিবছর মাঘ মাসে যা করা হয়, এবার পৌষেই পড়েছে সেই প্রয়োজনীয়তা। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ফারাক যত কমবে, শীত হয়ে উঠবে ততই অসহনীয়। সে জন্য গোটা মাঘ মাস এখনো পড়ে রয়েছে। এই শীত রাজধানীর জনজীবনকে প্রতিবছরই নাড়িয়ে দেয়। এবারেও তার বিরাম নেই। প্রতিদিনই বিমানের গাদা গাদা ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এমন দিন একটাও নেই, যেদিন দূরপাল্লার ট্রেন আট-দশ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে বা পৌঁছাচ্ছে না। ট্রেন বা বিমানের সফরসূচি আগাম জানানোই হয়ে উঠছে অসম্ভব ব্যাপার। যাত্রীদের ভোগান্তির একশেষ।

No comments

Powered by Blogger.