সত্যকথন

১৯৭১-এ যে সংঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম তার অবসান ঘটেছে দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু তিক্ততা আর সত্যিকারের বিভক্তি এখনও রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশেই বিভিন্ন সময়ে তা উঠে এসেছে। ঢাকায় বসবাসরত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান ঢাকা ভিত্তিক নিউএজ পত্রিকায় লিখে থাকেন। ওই যুদ্ধে নিহতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাকে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত করেছে আদালত। তিনি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তার ব্লগে সরকারি পরিসংখ্যানের পেছনের তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করেছেন। তিনি নিহতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আর জিজ্ঞাসা করেছেন এর সমর্থনে তথ্যপ্রমাণ আছে কিনা। তাকে ৬৫ ডলার জরিমানা বা এক সপ্তাহের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। অবমাননার বিচারপ্রক্রিয়ার সময় বার্গম্যানের প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিয়ে বিরোধিতা করেনি বাংলাদেশ সরকার। আর তাকে দন্ডিত করা হয়েছে রাষ্ট্রের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য। মামলাটিকে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার এক পরীক্ষা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর পরপরই মি. বার্গম্যান মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের কোন বিচারপ্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ হলেও তেমন কোন রায় বা বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করাটা মানুষের জন্য আরও বেশি কঠিন হওয়ার আশংকা রয়েছে। বাকস্বাধীনতা নিয়ে অসহিঞ্চুতার ক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ একা নয়। করাচি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সেখানে বাংলাদেশী এক বিজ্ঞজনের সফর আটকে দিয়েছে। ৩রা ডিসেম্বরের এক কনফারেন্সে তার অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ নামের ওই বাংলাদেশীর সফরের বিরোধিতা করে চাপ এসেছিল একটি ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ সরকার যে ভাবে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে তারা ক্ষুব্ধ বলে বলা হয়। ওই কনফারেন্সে ড. আহমেদের যে বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল সেটাও বিড়ম্বনার বৈকি। তাহলো- ‘সামাজিক বিজ্ঞানে ক্রান্তি বা পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জসমূহ’। ভাষাতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক ইস্যুর ঘনঘটা আর সত্যিকারের ব্যাপকতা বিবেচনায় এটা অপেক্ষাকৃত নমনীয় শিরোনাম বলেই প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়টি শিক্ষাগত আর শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা-উভয় ক্ষেত্র সংক্রান্ত নানা ইস্যু উত্থাপন করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন একটি জায়গায় বলে মনে হচ্ছে যেখানে ধ্যান-ধারণা, চিন্তাধারা ছড়িয়ে পড়ার থেকে সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। এ উপমহাদেশের দ্বন্দ্ব ১৯৪৭ সাল থেকে একাডেমিক বিতর্কের বিষয়বস্তু। আর এমন কোন বিতর্ক রুখে দেয়ার যে কোন প্রচেষ্টার নিন্দা করা উচিত।  
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ

No comments

Powered by Blogger.