ভৈরব বিএডিসি গুদামের ৯২৬১৬ বস্তা সার লোপাট হোতা রেজাউল গ্রেপ্তার

ভৈরবে বিএডিসির গুদাম থেকে লোপাট ৯২ হাজার ৬১৬ বস্তা সার। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে গুদাম থেকে কৌশলে লুট করা হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের এই বিপুল পরিমাণ সার। সার লুটের হোতা গুদামের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিম ও গুদাম রক্ষক খুরশেদ আলম। ৪ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই গুদাম থেকে তারা লোপাট করেছেন গুদামের ধারণক্ষমতারও বেশি প্রায় ৪ হাজার ৬৩১ টন সার। কতিপয় ডিলারদের প্রতিনিধির মাধ্যমে গুদাম থেকে সরানো হতো এ সার। বিপুল পরিমাণ এই সার লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ার পর গত ১৬ই নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই দুই কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে ভৈরব থানায় মামলা করা হলে তারা চলে যান আত্মগোপনে। গুদামরক্ষক খুরশেদ আলম সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিলেও ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিম ছিলেন পলাতক। কিন্তু পুলিশের গোয়েন্দা জালে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার ভোরে শ্বশুর ইউসুফ আলীর টাঙ্গাইল শহরের ভেড়াডোমা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জ জেলা ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে একটি বিশেষ দল। পরে দুপুরে নিয়ে আসা হয় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সার লোপাটের ঘটনার বিবরণ দেন রেজাউল। গ্রেপ্তারকৃত ভৈরব বিএডিসি গুদামের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিম টাঙ্গাইল জেলা সদরের পশ্চিম কাগমারা এলাকার মো. আবদুল কাদেরের পুত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএডিসির কিশোরঞ্জের যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. শহিদুল্লাহ শেখ গত ৬ই নভেম্বর ভৈরবে গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে গুদামের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় সারের ঘাটতি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন। পরে প্রাথমিক তদন্তে ওই আশঙ্কা সত্য হলে গত ১৬ই নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা গুদামের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিম ও গুদাম রক্ষক খুরশেদ আলমকে অভিযুক্ত করে ভৈরব থানায় একটি মামলা (নং-১৩) দায়ের করেন।  ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় দু’টি তদন্ত কমিটি। বিএডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে প্রধান প্রকৌশলী (সেচ) মোজাম্মেল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এবং কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জামিল আহমেদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১৭ই নভেম্বর রাতে তদন্ত কমিটি গঠনের পর দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা যৌথভাবে গুদাম পরিদর্শন করেন। কমিটির বৈঠকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। ভৈরবে বিএডিসির এই গুদাম থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাড়াও নরসিংদী, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তত ২০টি উপজেলার ডিলারদের নন ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এদিকে অভিযুক্ত দুজন কর্মকর্তার মধ্যে গুদামরক্ষক খুরশেদ আলম সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। পলাতক অপর অভিযুক্ত গুদামের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) রেজাউল করিমকে ধরতে এতদিন পুলিশি তৎপরতা চলে আসলেও তিনি ছিলেন অধরা। এ অবস্থায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে শ্বশুর ইউসুফ আলীর টাঙ্গাইল শহরের ভেড়াডোমা এলাকার ভাড়া বাসায় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সৈয়দ আবু সায়েম ও বাজিতপুর সার্কেলের এএসপি মৃত্যুঞ্জয় দে সজলের নেতৃত্বে ভৈরব থানার ওসি বদরুল আলম তালুকদার, ডিবি’র এসআই মো. মুর্শেদ জামান, আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মতিউর রহমান ও এসআই খাইরুল ইসলামের সমন্বয়ে জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল অভিযান চালায়। সেখান থেকে রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করার পর দুপুরে তাকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল কমল চন্দ্রের নিকট তাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল করিমকে কিশোরগঞ্জের ২ নং আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল কমল চন্দ্র জানান, পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হলে রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। মামলার বাদী ও কিশোরগঞ্জের যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. শহিদুল্লাহ শেখ জানান, ভৈরব গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ সার লোপাটের পর গুদামটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কুলিয়ারচর গুদাম থেকে ভৈরব গুদাম সংশ্লিষ্ট ডিলারদের মধ্যে সার সরবরাহ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.