দুপচাঁচিয়ায় চাঁদা দাবিতে স্কুলে যুবলীগের হামলা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় চাঁদা না পেয়ে উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়দানকারী আবদুস সবুর খন্দকার নামে এক ক্যাডার সোমবার সকালে আলতাফনগর ইবনে সৈয়দ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এতে শিক্ষকরা আতংকিত হয়ে পড়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। একই ইস্যুতে শনিবার দুপুরে ক্যাডাররা প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ভাংচুর ও তাকে হুমকি দেন। রোববার সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুয়েল সরদার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও প্রতিকার চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, ম্যানেজিং কমিটি সম্প্রতি ওই স্কুলে বিধি মোতাবেক শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক প্রদীপ কুমার প্রামাণিককে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এ নিয়োগে ডোনেশনের নামে মোটা অংকের বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সবুর খন্দকার। তিনি শুক্রবার রাতে মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষকের কাছে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। প্রধান শিক্ষক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। পরদিন শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে তালোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আমিনুর ইসলাম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল খানের নেতৃত্বে ১০টি মোটরসাইকেলে ২৫-৩০ জন দলীয় ক্যাডার স্কুলে যান। তারা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢোকেন। এ সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুয়েল সরদার, ইউপি সদস্য অশোক কুমার দেবসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দাবিকৃত টাকা দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে চাপ সৃষ্টি করেন। প্রধান শিক্ষক রাজি না হলে তারা টেবিলের কাচ ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টি করেন। এ সময় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহীদুর রহমান কয়েনসহ স্থানীয় লোকজন স্কুলে এলে ক্যাডারা টাকা রেডি রাখার হুমকি দিয়ে চলে যান। এতে স্কুলের শিক্ষকদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুয়েল সরদার প্রতিকার চেয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া পরিচালনা কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার রাতে দুপচাঁচিয়া থানায় প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন।
প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, যুবলীগ-ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারীদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সবুর খন্দকার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দলীয় কোন্দলের কারণে তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই অপরপক্ষের ইন্ধনে এ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহীদুর রহমান কয়েন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া সংগঠন যুবলীগের নামে চাঁদা দাবি করার ঘটনা খুবই লজ্জাজনক। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা নেতাদের কাছে সুপারিশ করা হবে।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় ফোনে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর যুবলীগ নেতাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.